মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
সংকটকালে মানুষের পাশে

নাটোরে ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিল বসুন্ধরা গ্রুপ

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিল বসুন্ধরা গ্রুপ

শুভ খান। অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জীবনের সবচেয়ে সংকট সময়টা পার করছেন। গেল ডিসেম্বরে মারা গেছেন শুভর বাবা। মা গৃহিণী। পরিবারে উপার্জনক্ষম একমাত্র বড় বোন। তিনি মাস্টার্সে পড়ছেন। টিউশনি করে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করেন। তা দিয়েই কোনোমতে জীবনযাপন করছে শুভর পরিবার। গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয় তাদের। সহায়তা পেয়ে শুভ বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার বড় বোন টিউশনি করে যে টাকা পান তা দিয়েই আমরা চলি। মাঝে-মধ্যে আত্মীয়রা কিছু সাহায্য করেন। আজকে আপনাদের সাহায্য দিয়ে কিছু দিন চলতে পারব। আপনাদের ধন্যবাদ আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আরেক উপকারভোগী মো. কফের। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। কাচের খেলনা, অ্যালবাম বানিয়ে মেলায় বিক্রি করতেন। গত দুই বছর ধরে কোনো মেলা হচ্ছে না। তাই তার বিক্রিও কমেছে কয়েকগুণ। এখন সপ্তাহে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এ আয়েই চলছে তার মানবেতর জীবনযাপন। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে কফের বলেন, আমাগর অসহায় দিনে আপনারা সাহায্য করলেন, খুব ভালো হইল। বসুন্ধরার চেয়ারম্যান স্যারকে আল্লাহ  হায়াত দারাজ করুন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকের মাসে গতকাল সকালে নাটোর জেলার সদর উপজেলায় আরও ৪০০ অসহায়, কর্মহীন পরিবার, সংবাদপত্র হকার ও পরিবহন শ্রমিক পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। জেলার শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ।

বসুন্ধরা গ্রুপের দেখানো পথে যেন অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসে এমন আশা ব্যক্ত করে নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা আশা করি তারা যে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে তা আরও সম্প্রসারিত হবে।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ পরিচালনের সময় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এ কঠিন সময়ে যখন মানুষের খাদ্য প্রয়োজন, সে সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। আমি তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন নাটোর ইউনাইটেড প্রেস ক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ফরহাদ হোসেন, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন, নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ স¤পাদক সুস্ময় দাসসহ সোহেল রানা, শিশির কুমার, প্রান্ত শীল, বর্ষা খাতুন, সাজেদুল ইসলাম, মাহতিম রাসেল, বন্যা খাতুন, তমা ভট্টাচার্য, মহিমা খাতুন, ইরিন, রায়হান, রানা খান। জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় নলডাঙ্গা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ৪০০ অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘের সদস্যরা। এ ছাড়া সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ ও করোনা সুরক্ষায় সচেতনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহসিন বলেন, আজকে বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘের উদ্যোগে ৪০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ হয়েছে। এ মহান উদ্যোগের জন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি সারা দেশের ২ লাখ মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এভাবে যদি আমাদের দেশের বড় কো¤পানিগুলো এগিয়ে আসে তবে এ মহামারীর সময় খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারব। এতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় সেটাও এগিয়ে যাবে। এ দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এর জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করি আপনাদের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের উপজেলায় অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের নলডাঙ্গায় ত্রাণের বিষয়টি আমি সমন্বয় করি। তাই কারও কোনো খাদ্যের প্রয়োজন হলে আমাদের জানাবেন। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বড় শিল্পগোষ্ঠীরাও যদি এগিয়ে আসে তবে করোনার এ সময়ে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, নলডাঙ্গা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহদী আশরাফ জীবন, নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ স¤পাদক সুস্ময় দাস। সিংড়া উপজেলার দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গতকাল বিকালে আরও ৪০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, নাটোর জেলার ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত বসুন্ধরা গ্রুপ তিন দিন ধরে করোনায় কর্মহীন জেলার সাতটি উপজেলার ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। করোনা সংকটের মধ্যে খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি কর্মহীন-দরিদ্র এসব পরিবার। মহামারী সংকটের মধ্যে বসুন্ধরার উপহার অসহায় দরিদ্রদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রশংসা করেন জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর