বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

১২ শতাংশ করোনা রোগী ভর্তি কমেছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

দেড় মাস ধরে নির্ধারিত শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি থাকার পর গতকাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫৫টি শয্যা খালি ছিল। পাশাপাশি মুগদা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দীসহ অন্যান্য হাসপাতালেও কভিড রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শয্যা সংকটে রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছিল হাসপাতালগুলো। এখন পরিস্থিতি বদলেছে, কোনো রোগী ফেরত পাঠাচ্ছে না হাসপাতালগুলো।

পাঁচ দিন ধরে করোনা পজিটিভের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে। এ পরিস্থিতিতে কভিড হাসপাতালগুলোয় সাধারণ শয্যায় রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে, তবে আইসিইউতে চাপ এখনো বেশি। হাসপাতালগুলোয় কভিড রোগীর চাপ কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুরোগীর চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু ও করোনা দুটি রোগের বিষয়েই সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৫৩৫ জন, মারা গেছেন ১৯৮ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৪ হাজার ৫৪৭ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯৬ জন। গতকাল করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যসূত্রে জানা যায়, ৯ আগস্ট সারা দেশে হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ ও আইসিইউতে ৮৭ দশমিক ৮২ শতাংশ রোগী ভর্তি ছিলেন। এক সপ্তাহ পর সোমবার সাধারণ শয্যায় ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও আইসিইউতে ৭৪ দশমিক ৭১ শতাংশ রোগী ভর্তি ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চার দিন ধরে আমাদের হাসপাতালে কভিড রোগীর চাপ কিছুটা কম। আগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকতেন, এখন কমে এসেছে। তবে আইসিইউ বেড খালি নেই। আইসিইউর জন্য চাপ এখনো রয়েছে।’ একই কথা বলেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চার দিন ধরে আমরা কোনো রোগী ফেরত পাঠাচ্ছি না। সবাই ভর্তি হতে পারছেন। এখন দু-একটি সাধারণ শয্যা খালি থাকছে। আইসিইউর জন্য আগে দিনে ১৫-২০টি আবেদন আসত, এখন তা পাঁচ-ছয়টিতে নেমে এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে কভিড রোগী কিছুটা কমেছে। তবে শনাক্তের হার এখনো অনেক বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানায় অবহেলা করা যাবে না, তাহলে আবার পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ৩২তম মহামারী সপ্তায় (৯-১৫ আগস্ট) নতুন কভিড রোগী ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও মৃত্যু ১২ দশমিক ২৭ দশমিক কমেছে। গত দুই মাসে প্রতিদিন ৭০-৭৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হতেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ সপ্তাহে তা ৩০-৩৫ জনে নেমে এসেছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ঢাকার বাইরের রোগী বেশি আসেন। তবে এ সপ্তাহে রোগীর চাপ কম। এখন আইসিইউতে শুধু আমাদের হাসপাতালে ভর্তি থাকা সংকটাপন্ন রোগী স্থানান্তর করা হচ্ছে, বাইরে থেকে রেফার্ড রোগীর জন্য অনুরোধ কম আসছে।’ গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৯ জন, এর মধ্যে রাজধানীর ৩০৬ জন। বাকিরা ঢাকার বাইরে। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১১৪ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬ জন। ৮ আগস্ট দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২২৪ জন। সারা দেশের হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ৯৪৬ জন। নয় দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে হাসপাতালগুলোয়। জুলাইয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২ হাজার ২৮৬ জন। আগস্টের ১৭ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ১ হাজার ৮৮৫ জন। গতকাল সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ৩২ জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ৬১০ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে গতকাল ভর্তি হয়েছে ১৩ জন, বর্তমানে ভর্তি আছে ১৮৬ জন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ১ হাজার ২১ জন এবং বেসরকারি ক্লিনিকে ৩ হাজার ৩৫২ জন।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচ- ব্যথা থাকলে অবশ্যই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কি না টেস্ট করে দেখতে হবে। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা ও ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর