শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনা নয়, খুন

মির্জা মেহেদী তমাল

সড়ক দুর্ঘটনা নয়, খুন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিরশ্বনী বাজার এলাকায় রাস্তার ওপর একটি লাশ দেখে লোকজন ভিড় করতে থাকে। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। লাশটি উদ্ধার করে। মাথা ও মুখ থেঁতলানো। দেখে চেনা যাচ্ছিল না। লাশটি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে কোনো গাড়ি তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনেরও ধারণা, এটি সড়ক দুর্ঘটনা। অজ্ঞাতনামা ওই যুবকের লাশের পরিচয় বের করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কাজ শুরু করে। লাশের ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশনের মাধ্যমে পুলিশ লাশের পরিচয় শনাক্ত করে। যুবকটির নাম মোক্তার হোসেন সৈকত। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার দেওপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল ওয়াহেদের ছেলে। এ ঘটনার ব্যাপারে থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাটি ২০২০ সালের জানুয়ারির। পিবিআই লাশটি পর্যবেক্ষণের সময় দেখতে পায়, যুবকটির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে একটি হাতের কবজির কাছে ধারালো অস্ত্রের    আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। নিছক সড়ক দুর্ঘটনা হলে হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকবে কেন? এমন চিন্তা এখন পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তার মাথায়। ঘটনাটি নিছক কোনো সড়ক দুর্ঘটনা নাও হতে পারে, এমন চিন্তা করে তদন্ত এগিয়ে নেয় তদন্ত কর্মকর্তা। ক্লু লেস এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ বিপাকে পড়ে। এমনও কোনো সূত্র তারা খুঁজে পাচ্ছেন না যে, খুনের তদন্তে সহায়ক হবে। পিবিআই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। মোক্তার হোসেনের মোবাইল নম্বরে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তদন্তের পর্যায়ে বার বার চেষ্টা করা হয় মোবাইল নম্বরে কল করে। কিন্তু খোলা পাচ্ছিল না ফোনটি। তবে শেষ বার খোলা ছিল ফোনটি ঘটনাস্থলের আশপাশেই ঘটনার দিন। পুলিশ ২০ জানুয়ারি রাত থেকে ২১ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহার হয়েছে ঘটনাস্থলে, সেসব ফোনের নম্বর সংগ্রহ করে। মোবাইল নম্বরের তালিকার সংখ্যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আরও ছোট করা হয়। একটি একটি করে পরীক্ষা করতে গিয়ে সন্দেহজনক কয়েকটি নম্বর খুঁজে পায়। এর মধ্য থেকে একটি নম্বর পাওয়া যায় যেটি দিয়ে মোক্তারের নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ হয়, এটি হতে পারে খুনি চক্রের কারও নম্বর। হয়তো মোক্তারের নম্বর নিতেই খুনিরা নিজেদের ফোনে কল করে থাকতে পারে। পুলিশ সেই নম্বর ট্র্যাক করতে থাকে।  এক পর্যায়ে পিবিআই খুঁজে পায় ফেনী সদরের আবুল হাসনাত তারেক নামে এক তরুণকে। তার দেওয়া তথ্যে পুলিশ ধরে ফেলে দক্ষিণ শর্শদি গ্রামের সৈয়দ হাফিজুর রহমান সাইফুল (২৬) ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাতাখালী গ্রামের মো. রাসেল (১৯)। এরা তিনজনই পেশাদার ছিনতাইকারী। পুলিশ তাদের জেরা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করে খুনের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি। আর এর মধ্য দিয়ে পিবিআই মাত্র ১৬ দিনের মধ্যেই খুনের রহস্য উদঘাটন করে। পুলিশের জেরায় তারা বলেছে, মহাসড়কে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য তারা। ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তারা একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো গ-২৯-৩৫৯৪) ভাড়া নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। ওই রাতে তারা ফেনী থেকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে। পরে ফেনী ফেরার পথে রাত দেড়টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিরশ্বনী বাজার এলাকায় সড়কের পাশে একজনকে হাঁটতে দেখে। তারা সেই পথচারীর সামনে গিয়ে গাড়িটি থামায়। টানাহেঁচড়া করে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। মারধর করে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে লাথি মেরে তাকে সড়কে ফেলে দেয়। এরপর তাকে গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত সৈকতের ভাই সুমন মিয়া রিপন চৌদ্দগ্রাম থানায় হত্যা মামলা করেন। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। তারা বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর