শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
জাসদ নেতা কাজী আরেফ হত্যা

নাম চেহারা পরিবর্তনেও শেষ রক্ষা হলো না

২২ বছর পর গ্রেফতার সেই খুনি রওশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ হত্যা মামলায় ফাঁসির আসামি, আত্মগোপনে থাকা রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মন্ডলকে ২২ বছর পর গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা। গত বুধবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানার ভারালীপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ আরও ছয়-সাতজনকে হত্যায় অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার এবং কয়েকটি ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে রওশনের।

এ বিষয়ে গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম

শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রওশনের আসল বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী হলেও তিনি গাজীপুরের একটি ঠিকানা ব্যবহার করে আত্মগোপনে ছিলেন। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ হত্যাকান্ডের পর রাজশাহীতে পাড়ি জমান অন্যতম খুনি রওশন। সেখানে নিজের নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন জীবন শুরু করেন।

চেহারায় ভিন্নতা আনতে ফেলে দেন মুখের দাড়িও। প্রথমদিকে রাজশাহীতে নিজেকে আলী নামে পরিচয় দিলেও পরে উদয় মন্ডল নামে গাজীপুরের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। দীর্ঘ সময় রাজশাহীতে থেকে সেখানে গরুর খামার গড়ে তোলেন। সর্বশেষ জমির দালালি শুরু করেন। রওশন এতটাই সূক্ষ্মভাবে দিন যাপন করতে থাকেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার হদিসই পায়নি। তার স্ত্রী বিষয়টি জানলেও কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়ে জানতো না যে, তিনি সিরিয়াল খুনি এবং মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু সম্প্রতি একটি হত্যা মামলার তদন্তে তিনি রাজশাহী এলাকায় আছেন বলে তথ্য পায় র‌্যাব। তদন্তের একপর্যায়ে তার মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। কিন্তু মোবাইল নম্বরটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। পরে গত বুধবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য নম্বরটি সচল করেন রওশন। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের এ তথ্য ধরেই তার বাসার নম্বর খুঁজে পায় র‌্যাব। কিন্তু নাম ভিন্ন হওয়ায়, এই ব্যক্তিই রওশন কি না সেটি নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। তবুও রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার ভারালীপাড়া এলাকার ওই বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে তিনি নিজেই কাজী আরেফ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, রওশন রাজবাড়ীর একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তে চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কাজে জড়িয়ে পড়েন এবং কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলেন। সে সময়ই তার সঙ্গে চরমপন্থি দলের সখ্য তৈরি হয়। যাদের সহযোগিতায় তিনি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময় বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হন। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের একটি সভায় প্রকাশ্য দিবালোকে কাজী আরেফসহ পাঁচজনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি পলাতক ছিল। তাদের মধ্যে রওশন একজন। শুধু কাজী আরেফ নয়, ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান আবদুল বাকীকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের তেরাইল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেন রওশন। ঘটনাস্থলে চেয়ারম্যান বাকী নিহত হন এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হন। এ হত্যাকান্ডের বিচারকার্য শেষে রওশন আলীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ২১ জুন স্কুলশিক্ষক আমজাদ হত্যা মামলার ১ নম্বর চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি রওশন। এ ছাড়াও তার নামে ২০০৫ সালে গাংনীতে একটি ডাকাতি মামলাও রয়েছে। রাজশাহী থেকে এসে তিনি এই কাজগুলো করে আবার ফিরে যেতেন। প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি সভা চলার সময় ব্রাশফায়ারে কাজী আরেফসহ জাসদের পাঁচ নেতা নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০০৪ সালে ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় কুষ্টিয়ার আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০০৮ সালে হাই কোর্ট নয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে, একজনকে খালাস দেয় ও ১২ জনের সাজা মওকুফ করে। ২০১৬ সালে ৮ জানুয়ারি তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নয়জনের মধ্যে রওশনসহ পাঁচজন পলাতক ছিলেন। রওশন বাদে অন্য চারজন হলেন- হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত মান্নান মোল্লা, জালাল ওরফে বাসার, বাকের ও জীবন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে তারা ভারতে অবস্থান করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দন্ডপ্রাপ্তদের গ্রেফতার কার্যকর করার দাবি জাসদের : জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ হত্যা মামলায় ফাঁসির দ প্রাপ্ত পলাতক খুনি রওশন গ্রেফতার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা কাজী আরেফ আহমেদ হত্যা মামলার দ প্রাপ্ত অন্য পলাতক খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দন্ডপ্রাপ্তদের দন্ড কার্যকর করার দাবি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর