রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা

ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভেঙে যাচ্ছে সড়ক তিস্তার পানি বৃদ্ধি, বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা, যমুনা, গড়াই ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি। সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এতে দিন দিন বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা। অনেকেই পরিবার-পরিজনসহ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। খাবার পানির কষ্টে পড়েছেন এসব পানিবন্দী মানুষ। এদিকে ফরিদপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের বন্যা  পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা, মথুরায় যমুনা, কামারখালীতে গড়াই ও পাটেশ্বরীতে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরিচা পয়েন্টে যমুনা ও বাঘাবাড়ী পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমা আতিক্রম করতে পারে।

ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : ফরিদপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি আরও ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ফরিদপুর সদরের তিনটি ইউনিয়নের পানিবন্দী গ্রাম ও পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। দেখা দিয়েছে ভাঙন। জানা গেছে, ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের মধ্যে ১ হাজার ১৫০, ডিক্রির চর ইউনিয়নের ১২ গ্রামের ১ হাজার ২০০ ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ১৬ গ্রামের ৩ হাজার- মোট ৪১ গ্রামের ৫ হাজার ৩৫০টি পরিবার বর্তমানে পানিবন্দী। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি আরও ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমর ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধির প্রবণতা কমে আসছে। আশা করি দুই দিন পর পানি কমতে শুরু করবে।’

বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে হাজারো পরিবার : তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে উজানের পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের সব কটিই খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে তিস্তার পানি সময়ের বিবর্তনে কমা ও বাড়ার কারণে তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চলের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গা ও বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। তিস্তা-তীরবর্তী লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী। গতকাল দুপুর থেকে তিস্তার দোয়ানি ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার থেকে কমছে। তবে গতকাল আবারও পানির প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। বন্যার্ত মানুষ জানিয়েছেন ছয় দিন ধরে পানিবন্দী থাকলেও কোনো সহায়তা পাননি।

কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন : রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা-তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে পানি কমার সঙ্গে বিনাবিনার চরসহ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে শতাধিক পরিবারের ভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেইে ভাঙন থেকে ঘর, আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এদিকে বন্যাদুর্গতদের গতকাল ত্রাণ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর