সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

কাবুল বিমানবন্দরে হামলার আশঙ্কা

দেশ ছাড়তে আফগানদের ঢল অব্যাহত । বিমানবন্দরে মানবেতর পরিস্থিতি । ভিড়ের চাপে সাত আফগানের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাবুল বিমানবন্দরে হামলার আশঙ্কা

বিমানবন্দরে এখনো অনেক মানুষের ভিড়। কাছেই অবস্থান নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা -সিএনএন

তালেবানদের আফগানিস্তান দখলের এক সপ্তাহ পরও দেশ ছাড়তে আফগানদের ঢল অব্যাহত। গতকালও কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা দেখা গেছে। দেশ ছাড়ার এই ঢলে বিমানবন্দরের বাইরে ভিড়ের চাপে সাত আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে বাড়তি নিরাপত্তা সতর্কতা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পর থেকেই আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরে বিদেশি নাগরিক, কূটনীতিকদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক আফগানরা ভিড় করছিলেন। শনিবার বিমানবন্দরের বাইরে লাখ লাখ আফগানের উপস্থিতি তুমুল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম দেয় বলে স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদক জানিয়েছেন। ভিড়ের ধাক্কায় সামনে থাকা অনেকেই ব্যারিকেডে আঘাত পান। স্কাই নিউজে দেখানো ফুটেজে দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিদেশি সেনাদের ভিড়ের চাপে আহতদের তুলে নিতে দেখা গেছে। উপস্থিত অনেকের পানিশূন্যতা দূর করতে তারা বোতলের পাশাপাশি হোস পাইপের মাধ্যমেও পানি দিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের বাইরে ভিড়ের চাপে সাত আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। হুড়োহুড়িতে এসব মৃত্যু হয়েছে। বিমানবন্দরের পরিস্থিতি এখনো খুবই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু আমরা পরিস্থিতি যতটা পারা যায় নিরাপদ রাখার জন্য সম্ভব সবকিছু করছি। বিবিসি জানিয়েছে, কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখনো সাড়ে ৪ হাজারের মতো মার্কিন সেনার নিয়ন্ত্রণে। ৯০০ ব্রিটিশ সেনাও আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থাপনাটি টহল দিচ্ছে। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান যোদ্ধারা বিমানবন্দরের বাইরের দিকে বেশকিছু তল্লাশি পয়েন্ট বসিয়েছে। যে আফগানদের দেশ ছাড়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, তাদের বিমানবন্দরে ঢুকতে দিচ্ছে না তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিনিধি স্টুয়ার্ট রামসে জানান, বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের জটলার সামনের সারিতে থাকা অনেক মানুষ পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তার বর্ণনা মতে, এটি ছিল ‘এখন পর্যন্ত নিকৃষ্টতম দিন’ এবং তাদের বিশ্বাস ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ মারা গেছেন। শনিবারের তুলনায় রবিবার আফগান বিমানবন্দরের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তালেবানরা বিমানবন্দরের বাইরে ‘কিছুটা শৃঙ্খলা’ ফিরিয়ে এনেছে বলে জানিয়েছেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী। রয়টার্সের খবরে বিমানবন্দরের বাইরে তালেবানদের মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি ছোড়ার খবরও দিয়েছে।

কাবুল বিমানবন্দরে আইএস হামলার আশঙ্কা : হাজারো মানুষের অপেক্ষা ও উদ্ধারাভিযানের মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের আফগানিস্তান অংশের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে মার্কিন নাগরিকদের কাবুলের বিমানবন্দর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার প্রকাশিত হওয়া এক নিরাপত্তা বিষয়ক সতর্কবার্তায় প্রবেশপথের বাইরে নিরাপত্তার হুমকি তৈরি হতে পারে উল্লেখ করে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, শুধু মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি যদি কোনো ব্যক্তিকে ওই এলাকায় যেতে নির্দেশ দেন, কেবলমাত্র তখনই কোনো মার্কিন নাগরিক ওই এলাকায় যেতে পারেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং বিমানবন্দরে যাওয়ার বিকল্প রাস্তার বিষয়টি যাচাই করছেন। আইএসের হামলার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেওয়া হয়নি। আইএসও কাবুলে হামলা করার কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি। তবে অন্যান্য দেশও তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। জার্মানির সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- বিমানবন্দর এখনো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিমানবন্দরে প্রবেশ করা অনেক সময়ই অসম্ভব। সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত কয়েক ঘণ্টায় বিশেষভাবে অবনতি হয়েছে।

এক সপ্তাহে ১৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র : ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। শনিবার হোয়াইট হাউস এ ঘোষণা করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, তালেবান কাবুল প্রবেশের আগে শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষ থেকে মোট ২২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পেন্টাগনের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল উইলিয়াম টেলর বলেন, গত সপ্তাহে সরিয়ে নেওয়া ১৭ হাজারের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ জন আমেরিকান ছিলেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার কাছে ‘নিখুঁত পরিসংখ্যান’ নেই যা থেকে বোঝা যায় ঠিক কতজন আমেরিকান বর্তমানে কাবুল এবং আফগানিস্তানের অন্যান্য অংশে রয়েছেন। শুক্রবার পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, মোট সংখ্যাটি নির্ভর করছে বেশকিছু বিষয়ের ওপর। পররাষ্ট্র দফতর সব মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে মার্কিন সহায়তা চাওয়া আফগানদেরও সহায়তা করা হবে। নড প্রাইস বলেন, যতদিন, যত মানুষের জন্য যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করে যাব সাহায্য করতে।

জানা যায়, ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা রয়েছে। ৩১ আগস্টের পর ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তাদের জোটের বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে ৩১ আগস্টের পরও যেন কাবুল বিমানবন্দর থেকে সেসব দেশের নাগরিকদের উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হয়। তারা আশঙ্কা করছে, ৩১ আগস্টের মধ্যে তাদের দেশের সব নাগরিক এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিকদের সবাইকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না সব আমেরিকান নাগরিক এবং সেসব আফগান নাগরিক যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংঘাতের সময়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে তাদের সরিয়ে নেওয়া না হচ্ছে ততক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশে থাকবে।

সর্বশেষ খবর