করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ বিরতির পর গত ১০ আগস্ট থেকে সৌদি আরব শর্ত সাপেক্ষে বিদেশিদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর অনুমতি পেলেও বিশেষ করে টিকা সমস্যার কারণে গত ১৫ দিনে একজন যাত্রীও পাঠাতে পারেনি, শুরু হয়নি ফ্লাইট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরব শর্ত দিয়েছে যারা মডার্না, ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসনের টিকা দেবেন কেবল তারাই ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যেতে পারবেন। এই চার ভ্যাকসিনের বাইরে অন্য কোনো টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এদিকে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে চীনের তৈরি সিনোফার্ম টিকা দেওয়া হচ্ছে। যা সৌদি সরকার ওমরাহ যাত্রীদের জন্য অনুমোদন দেয়নি। তবে সিনোফার্ম দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীরা বুস্টার ডোজ হিসেবে অন্য কোনো টিকা নিলে তারাও ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে না বুস্টার ডোজ। অন্যদিকে নানা বিধিনিষেধের কারণে ওমরাহ পালনের  ব্যয়ও বাড়ছে। অনুমতি মিললেও ব্যয় বৃদ্ধি ও বিধিনিষেধের কারণে দুশ্চিন্তায় এজেন্সি মালিকরা। ফলে টিকা জটিলতায় আটকে আছে বাংলাদেশিদের ওমরাহ যাত্রা।

জানা যায়, সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের জন্য ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের ২ ডোজ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ ডোজ, মডার্নার ২ ডোজ কিংবা জনসন অ্যান্ড জনসনের ১ ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন তাদের অনুমতি দেবে সৌদি আরব। যদি কেউ চীনের সিনোফার্ম টিকা নেয়, তবে  বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার, অক্সফোর্ড, মডার্না, জনসনের ডোজ নিলেই অনুমতি দেওয়া হবে।

জানা যায়, ১ মহররম ১০ আগস্ট থেকে বিদেশিদের ওমরাহ পালনের সুযোগ দেওয়া হলে বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে যেতে  শুরু করেছেন ওমরাহ পালনকারীরা। তবে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনকারীদের সৌদি যাত্রা শুরু হতে পারে সেপ্টেম্বর থেকে। তবে বিধিনিষেধের কারণে পর্যাপ্ত ওমরাহ পালনকারী পাওয়া যাবে না বলেও শঙ্কা এজেন্সিগুলোর। এজেন্সি মালিকরা বলছেন, সরকার ব্যাপক হারে সিনোফার্ম টিকা আমদানি করছে এবং দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্য টিকার বুস্টার ডোজ ছাড়া সৌদি সরকার ওমরাহর অনুমোদন দিচ্ছে না। শুধু ওমরাহ নয়, আগামী বছর হজের ক্ষেত্রেও এটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে যারা আগে অক্সফোর্ডের টিকা নিয়েছেন তারা সবাই যে ওমরাহ পালনে আগ্রহী তাও নয়। ফাইজার ও মডার্নার টিকা বেশিরভাগ পেয়েছেন বিদেশগামী কর্মীরা। ফলে ওমরাহর যাত্রী পাওয়া গেলেও টিকার জন্য অনেকেই আটকে যাবেন। অন্যদিকে সৌদি আরবের নানা বিধিনিষেধ আরোপে ওমরাহর খরচও বাড়বে। এজেন্সিগুলো জানিয়েছে এখন বিমানভাড়া অনেক বেড়েছে। আগে হোটেলের এক রুমে চার থেকে ছয়জন ওমরাহ যাত্রী থাকার সুযোগ থাকলেও এবার তা সম্ভব নয়। সৌদির শর্তানুযায়ী দুজনের বেশি এক রুমে থাকা যাবে না। পরিবহন, ভিসা প্রসেসিং অন্যান্য খাতেও খরচ বেড়েছে। ফলে ১ লাখ ৫০ হাজার নিচে ওমরাহ পালনের প্যাকেজ করা সম্ভব হবে না।

সিনোফার্মের টিকা অনুমোদনের দাবি : ওমরাহ যাত্রীদের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদন ও বিমান ভাড়া কমানোসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্রুত এসব সমাধানে উদ্যোগ নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। তিনি সিনোফার্মের টিকা গ্রহণ করে ওমরাহ পালনের সুযোগ সৃষ্টিতে সৌদি সরকার ও রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন। যাত্রীদের ভাড়া কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে আহ্বান জানান।