‘মৌমাছি মৌছাছি কোথা যাও নাচি নাচি। দাঁড়াও না একবার ভাই। ঐ ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ কবিতার মতোই এক সময় ছিল মৌমাছির বিচরণ। কিন্তু এখন হারিয়ে যেতে চলেছে সেই দিনের স্মৃতি। মৌমাছি ও মৌচাক তেমন দেখাই যায় না বলা যায়। বর্তমান প্রজন্মের শিশু ও কিশোররা মৌমাছির কথা ভুলেই গেছে প্রায়। এক সময় নীলফামারীর গ্রামীণ জনপথের আশেপাশে ঝোপ ঝাড়ে, বাগান-বাড়ি, আঙ্গিনার উঁচু গাছের বাঁকা ডালের নিচে মৌমাছি ও মৌচাক দেখা যেত। এখন তেমন আর দেখতে পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে এখন মধু সংগ্রহকারীরা বিভিন্ন ফসলের মাঝে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌ চাষ করছেন।
এদিকে মৌমাছি বিলুপ্ত হতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফল ও ফসল উৎপাদনে। মৌমাছি ফুলের রস আহরণ করে জীবন ধারণ করে। উপহার দেয় প্রকৃতির বিস্ময়কর নিয়ামক মধু। ফুলে মৌমাছিসহ নানা পোকামাকড় বিচরণের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই ফুল থেকে ফল ও ফসল ফলে। মধু সংগ্রহকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে মৌচাক খুঁজে পাওয়া যায় না। মৌমাছির সংখ্যাও কমে গেছে। এক সময় সহজেই মধু পাওয়া যেত, এখন সেটা আর নেই। পাখি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, মৌমাছি বা মৌচাক হারিয়ে যাওয়ার বড় কারণ হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ ছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বসবাসের উপযোগী পরিবেশের অভাব, খাদ্যের অভাব, ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের প্রয়োগ, মধু সংগ্রহকারীদের মৌমাছি পুড়িয়ে হত্যা করাসহ নানাবিধ কারণে মৌমাছি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কৃষি প্রধান দেশে ফসল ও ফলফলাদির উৎপাদন বৃদ্ধিতে মুক্ত মৌমাছি যে হারে নীলফামারী থেকে কমে যাচ্ছে, তাতে এ অঞ্চলে ভবিষ্যতে কৃষির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হাকীম মো. মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ বলেন, মধুতে প্রচুর পুষ্টি ও খাদ্য গুণ রয়েছে। মধু দুধ বা পানি দিয়ে মিশ্রণ করে খেলে নিমিষেই হারানো শক্তি ফিরে পাওয়া যায়। সুস্বাস্থ্য গঠনে ও বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মধু ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও কোমলতা বাড়ানোর জন্য মধু বিশেষভাবে উপকারী।