শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুজ্বরে ঊর্ধ্বমুখী মৃত্যু

দুই মাসে ৪০, আগস্টে ২৮ জন, শিশুরা উচ্চ ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেঙ্গুজ্বরে ঊর্ধ্বমুখী মৃত্যু

পাঁচ বছর বয়সী সৌহার্দ্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি -জয়ীতা রায়

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার মারা গেছে তিন মাস বয়সী শিশু আহমাদ। ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। আইসিইউ থেকে লাইফ সাপোর্টে নিলেও ফেরানো যায়নি তাকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসে মারা গেছেন ২৮ জন। ঊর্ধ্বমুখী এই মৃত্যু হার বাড়াচ্ছে উৎকণ্ঠা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৭ জন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি ২১৭ জন, বাকি ৫০ জন রাজধানীর বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৯০ জন, এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৬৫ জন। এ বছর জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইতে ২ হাজার ২৮৬ জন, চলতি মাসের ২৬ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৬২ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে জুলাইতে ১২ জন, আগস্টে ২৮ জন মারা গেছেন। করোনা মহামারীর মধ্যে নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি কয়েকটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতালসহ ঢাকার বাইরে গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালকেও ডেঙ্গু রোগী ভর্তির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুজন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৩ জন, বিএসএমএমইউ-তে একজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চারজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দুজন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৯ জন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন। বর্তমানে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৭১ জন, বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি আছেন ৫৯৪ জন।  স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, গত আট মাসের মধ্যে আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের যেসব জায়গায় ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি সেসব এলাকায় মশা নিধনে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে। কয়েক দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর এডিশ মশা নিয়ে জরিপ করেছে জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘লার্ভার ঘনত্ব অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মগবাজার, নিউ ইস্কাটন, নিকুঞ্জ, মিরপুরের দারুস সালাম, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, নিকেতন এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স বেশি পাওয়া গেছে। কোনো এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপের একক ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের ১৯টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৪০ এর বেশি পাওয়া গেছে। প্লাস্টিকের ড্রাম, প্লাস্টিকের বালতি, ফুলের টব, পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ার, রঙের কৌটাতে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।’ ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে অনেক শিশু আসছে। আউটডোরেও অনেক রোগী আসছে। জুলাই মাসে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে, এ মাসেও ঊর্ধ্বমুখী।

 এই শিশু বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক। করোনায় শিশুদের মাইল্ড সিম্পটম হয় এবং তাদের ঝুঁকিটা কম থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুতে শিশুরা অনেক ঝুঁঁকিতে থাকে। শিশুদের শরীরে কামড়াতে মশার সুবিধা হয়। প্রায় বিনা বাধায় শিশুর পাতলা চামড়া ভেদ করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কামড়ায়। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে মশারির পাশাপাশি ক্রিম ও রিপেলেন্ট মাখানো যেতে পারে। তাই জ্বর এলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর