শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সংগ্রাম করে টিকে আছে শামুকখোল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সংগ্রাম করে টিকে আছে শামুকখোল

পদ্মা নদীর তীরে সবুজে ঘেরা নির্মল বায়ুর শহর রাজশাহী। দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় গাছপালা যেমন বেশি তেমনি আছে নানা প্রজাতির পাখির আবাস। এসব পাখির মধ্যে শামুকখোল প্রজাতির জলচর পাখির বসবাস ও চলাফেরা অনেক বেশি দেখা যায়। রাজশাহীর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে এটি অন্যতম। বড়সড় গড়নের এই পাখির ঝাঁক বেঁধে পদ্মার চরে বিচরণ তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিপ্রেমীরা এর ছবি তুলতে নিয়মিত ছুটে আসেন।

শামুকখোল সাইকোনিডি গোত্রের বিশালকার জলচর পাখি। দেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এই প্রজাতির পাখিরা মূলত দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় ও খাবার খায়। সাইকোনিডিয়া গোত্রে কয়েক হাজার পাখি নিয়মিত আবাস হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। রাজশাহীতেও শামুকখোল প্রজাতির পাখিদের বসবাসের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাখিদের বসবাস উপযোগী গাছপালা কেটে আশ্রয়হীন করা হচ্ছে তাদের। মানুষের এমন নিষ্ঠুর আচরণের পরও এই প্রজাতির পাখিরা ঘুরে ফিরে নতুন আশ্রয় খুঁজে সংগ্রাম করেই টিকে আছে রাজশাহীতে। পাখি গবেষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে শামুকখোল পাখি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতর এবং আশপাশের গাছগুলোতে বাসা বাঁধে। এখানে শামুকখোল প্রজাতির কয়েক হাজার পাখি নিরাপদেই ছিল। পরে ২০১৯ সালে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির নির্মাণ কাজ শুরু হলে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তবে খুব দ্রুতই নতুন আশ্রয় হিসেবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গাছগুলোকে খুঁজে নেয়। এখানে এসেও হারাতে হয় বাসস্থান। ২০২০ সালে হাসপাতালের গাছের ডালপালা কাটার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়বারের মতো আশ্রয় হারিয়েও রাজশাহী ত্যাগ করেনি শামুকখোলের দল। তারা দ্রুতই হাসপাতালের পূর্ব পাশের রাস্তার ধারের গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি হাসপাতালের পুরনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সময় প্রায় (পূর্ব পাশের) অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাই পাখিরা এবার আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে। বারবার আশ্রয়হীন হওয়ার পরও পাখিগুলো শহর ছেড়ে যায়নি।

বর্তমানে রাজশাহী মহানগর ছাড়াও দুর্গাপুর ও বাঘা উপজেলায় শামুকখোল পাখির আবাস আছে। সেখানে বিভিন্ন আমের গাছে বাসা বেঁধে বসবাস করছিল পাখিরা। কিন্তু পাখির কারণে গাছে আম ধরছিল না বলে বাঘার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের পাখিদের তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন বাগান মালিকরা। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে উচ্চ আদালতের দৃষ্টিতে আসে। আদালত বাগান মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে পাখিদের আবাস নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে খোর্দ্দবাউসা গ্রামের বাগান মালিকদের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ভাড়া হিসেবে চলতি বছরের ২১ মে পাঁচজন বাগান মালিক ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। রাজশাহীর সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফের প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় আট বছর আগে শামুকখোল প্রজাতির পাখি রাজশাহীতে আসে। এরই মধ্যে গাছ ও ডালপালা কেটে ফেলায় তিনবার পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়েছে। আমরা প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছি। তবুও এই প্রজাতির পাখিরা শহর ছেড়ে যায়নি। আমরা আশা করি পাখিগুলো এখন যেখানে আছে সেখানে থাকতে পারবে। কারণ, প্রকৃতি নিয়েই আমাদের বাঁচতে হয় এবং এরা প্রকৃতিরই অংশ। তিনি আরও বলেন, কয়েকবার আশ্রয় হারিয়েও পাখিরা এখনো এই শহরে সংগ্রাম করে বসবাস করছে। কিন্তু নিয়মিত আশ্রয় হারাতে থাকলে তারা আর হয়তো এই শহরে থাকবে না। নতুন কোনো আশ্রয় খুঁজে নেবে। পাখিরা শহরের সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে এই পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় কখনোই নষ্ট করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর