শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা

বৃষ্টি থাকতে পারে আরও তিন দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা

সিরাজগঞ্জে বাড়ির উঠানে পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তা অব্যাহত থাকবে। তবে গঙ্গার পানি কমেছে, স্থিতিশীল রয়েছে পদ্মার পানি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্ট, যমুনার কাজীপুর, সারিয়াকান্দি ও মতুরা পয়েন্ট এবং তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অবনতি হতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে উজানে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে দেশে আরও কিছু স্থানে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদি বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আর আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাস দিচ্ছে, আগামী দুই সপ্তাহ উজানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকায় নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে তলিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গতকাল জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি বাড়ছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে পদ্মা অববাহিকার পানি। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অবনতি হতে পারে। আর রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। দেশের নদ-নদীর মধ্যে ১০৯টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের ১০টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে বয়ে যাচ্ছে। পানি বেড়েছে ৭২ পয়েন্টে। আর কমেছে ৩৫ পয়েন্টে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি ধরনের বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ১৯৬ মিলিমিটার।

বৃষ্টি থাকতে পারে আরও তিন দিন : গতকাল ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। তবে দেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। আগামী তিন দিন বৃষ্টির এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। গতকাল আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কক্সবাজারে ১৯৬ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৬ মিলিমিটার। তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয় ১১ মিলিমিটার। আর এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজারের ১৭৮ মিলিমিটার।

নড়াইলে শতাধিক বাসিন্দা পানিবন্দী : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের আটঘরিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে শতাধিক বাসিন্দা পানিবন্দী রয়েছেন। প্রকল্পের ঘর বিলের মধ্যে নির্মিত হওয়ায় বর্ষাকালে পানিবন্দী অবস্থায় বসবাস করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : অবিরাম বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে সব কটি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল বিকালে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়লেও ধরলার পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যায় সিরাজগঞ্জে খাদ্য-পানি সংকট : যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কয়েক হাজার বসতভিটায় পানি উঠেছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ মানুষ বসতভিটায় চৌকি উঁচু করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে ওয়াপদা বাঁধে ঝুপড়ি তুলে আশ্রয় নিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। অনেকে নৌকায় চলাচল করছেন। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ফরিদপুরে পদ্মার পানি কমেছে, বেড়েছে দুর্ভোগ : ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত দুই দিনে পদ্মা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

ফেনীতে বাঁধ ভেঙে চার গ্রাম প্লাবিত : ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর এক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত চার গ্রাম। বুধবার রাতে পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানির চাপে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর অংশের একটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর, ঘনিয়ামোড়া, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া ও কিসমত ঘনিয়ামোড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

টাঙ্গাইলে যমুনা ও ধলেশ্বরীর পানি বাড়ছে : টাঙ্গাইলে যমুনা, ধলেশ্বরীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ার ফলে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মোকনা, দপ্তিয়র, সোলিমাবাদ, ভারড়া ও দেলদুয়ার উপজেলার লাওহাটি, ফাফিলহাটি, দেউলি ইউনিয়নের তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাঙন অব্যাহত আছে।

বৃষ্টিতে বাড়ছে দুর্ভোগ : রাজবাড়ীর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সারা দিনে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর