শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সুতা সংকটে বন্ধ হচ্ছে দেশি তাঁতশিল্প

কৌশলে সুতা আমদানি বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে একটি সিন্ডিকেট

শফিউল আলম দোলন

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় সারা দেশে দেশীয় তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে। বন্ধ হয়ে গেছে ৬০ ভাগ তাঁত। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের একটি সিন্ডিকেট কৌশলে সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম এই সংকট সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বলা হয়, মাত্র ৭৫ টাকা পাউন্ডের সুতার দাম বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করেছে তথাকথিত এই সিন্ডিকেট। ফলে ২৪ লাখ দেশি তাঁতের মধ্যে ১৫ লাখ তাঁতই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন ৬০ লাখ শ্রমিক। গত দুই বছরে এই খাত থেকে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। সারা দেশে এই তাঁত শিল্প বন্ধ হওয়ার পিছনে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহেলা, অনিয়মকে দায়ী করা হচ্ছে তাঁতি সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে।

বিভিন্ন জেলার তাঁতি সমিতির অভিযোগ, নানা কৌশলে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। বোর্ডের অধীনে সরকারি কেনাকাটাসহ এই শিল্প থেকে নানাভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। দেশীয় তাঁত বন্ধ রেখে পরোক্ষভাবে কটন মিলগুলোকে ব্যাপক বাণিজ্যের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। ফলে করোনার প্রভাবে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন পার করছেন বেকার হয়ে পড়া তাঁতি পরিবারের সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার নেতিবাচক প্রভাবে এই খাতে শুধু সংকট সৃষ্টিই নয়, দেশীয় তাঁতের তৈরি কাপড়ের বাজারও পড়ে গেছে। দুই বছর ধরে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, নানা অনিয়মের কারণেই এই সুতা আমদানি স্থগিত রয়েছে। আমদানিকৃত ওই সুতা প্রকৃত তাঁতিরা পাচ্ছিলেন না। আমি তাঁত বোর্ডে আসার পর থেকে চেষ্টা করছি তা চালু করার জন্য। কেনাকাটায় আর্থিক অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগ যে কেউ-ই করতে পারেন। তবে এ কথা সত্য যে, দেশের তাঁত শিল্প এখন ভয়ানক সংকটে রয়েছে। আমরা তাঁতিদের মাঝে নতুন ঋণ বিতরণের মাধ্যমে তাদের পুঁজি সংকট কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।  জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে এই শিল্পটাই আজ ধ্বংসের পথে। তাঁতিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শুল্কমুক্ত পলিয়েস্টার সুতা আমদানির নির্দেশ কৌশলে লঙ্ঘন করে টানা দুই বছর ধরে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। তাঁতি সমিতি কিংবা তাঁতি সমাজের কোনো প্রতিনিধি কোথাও রাখা হয়নি দুই বছর ধরে। তাঁতিদের প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের জিএম কামনাশীষ দাস দেশীয় তাঁত শিল্পের বর্তমান দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, তাঁত শিল্পকে রক্ষার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী পলিয়েস্টার সুতা আমদানি আবারও চালু করা উচিত। দেশীয় তাঁত শিল্প রক্ষার স্বার্থে, এই শিল্পের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের স্বার্থে- সর্বক্ষেত্রেই তাঁতিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো উচিত। তিনি আরও বলেন, তাঁতিদের নিয়ে কর্মকান্ডে যদি তাঁতিদেরই সংশ্লিষ্টতা না থাকে- তাহলে সেখানে অনিয়মের সুযোগ থাকে। জানা গেছে, তাঁত বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও নরসিংদী জেলার তাঁতিদের পক্ষ থেকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করে তা নিরসনের আবেদন জানানো হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে- অনেক দিন থেকে তাঁতিরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর