শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জাহাজ চালাতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান সিমেন্ট শিল্প মালিকরা

পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমদানি পণ্য অর্ধেক নিজস্ব জাহাজে এবং বাকি অর্ধেক ভাড়া করা জাহাজে পরিবহনের শর্ত বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিসিএমএ। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নৌপথে জাহাজ চলাচলে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে তারা। সংগঠনটি বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতি এখনো করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত। এমন সময়ে নৌ পরিবহন অধিদফতর লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত নতুন আদেশ জারি করায় অভ্যন্তরীণ নৌ খাতে নতুন সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সিমেন্ট শিল্প মালিকরা।

এ প্রসঙ্গে বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, শিল্প মালিকদের মালিকানাধীন লাইটার জাহাজগুলোর প্রত্যেকটি শিল্পের লজিস্টিক সাপোর্ট হিসেবে অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব নৌযান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয় না। শিল্পের প্রয়োজনে এবং ভোক্তাদের কাছে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিল্প পণ্য পৌঁছানোর স্বার্থে আমাদের জাহাজগুলো সরাসরি আমাদের মাধ্যমেই পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত। দেশের ভোক্তা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে যৌক্তিক পণ্য মূল্য নির্ধারণ করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি। তিনি আরও বলেন, সবার মাঝে ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক বজায় রেখে সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাবেন এটি আমাদেরও প্রত্যাশা। সিমেন্ট কোম্পানিগুলো বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমরা আশা করি, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না যাতে সিমেন্টের মূল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। আমরা ইচ্ছা করলেই সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারি না। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করছি। সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নৌ পরিবহন অধিদফতর গত ২৩ আগস্ট জারি করা নতুন আদেশ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর ও বন্দরের আশপাশে সমুদ্রে নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সব লাইটার জাহাজকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল বা ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত হয়ে পণ্য বোঝাই ও খালাস করতে হবে। আদেশ অমান্যকারী নৌযান মালিক, মাস্টার ও নাবিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে ডব্লিউটিসির সিরিয়ালের বাইরে কোনো জাহাজে বা নৌযানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকছে না। পণ্য পরিবহনের জন্য ২০১৩ সালের নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন শিল্প মালিকরা নিজস্ব জাহাজ ব্যবহার করে যে পণ্য পরিবহন করছেন সেটিও সীমিত হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, পুরো নৌযানের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলার তৈরি হবে এবং নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। উপরন্তু, ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল কোনো সরকারি সংস্থা নয় অথবা কোনো আধা-সরকারি সংস্থাও নয়। এটি সরকারের কোনো এজেন্টও নয়। ফলে তাদের সিরিয়ালভুক্ত হয়ে পণ্য পরিবহনের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তবুও তারা তাদের সিরিয়ালভুক্ত হয়ে পণ্য পরিবহনের নামে এক নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এর আগেও গত বছর নৌপরিবহন অধিদফতর থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বলা হয়েছিল, যে কোনো লাইটার ভেসেলকে সরকারি অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও সমুদ্র অতিক্রমের (ক্রসিংয়ের) জন্য ডব্লিউটিসির অনুমোদন নিতে হবে। অন্যথায় ডব্লিউটিসি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। ওই চিঠি পাওয়ার পর শিল্প মালিকরা সোচ্চার হন এবং নৌপরিবহন অধিদফতরের সঙ্গে সভা করেন। মহা-পরিচালক নৌপরিবহন অধিদফতর স্বীকার করেছিলেন যে, ওই নোটিসে কিছুটা ভুল ছিল। যা পরবর্তীতে সংশোধন করে দেওয়া হবে। তখন এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে, সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতিত সব মালবাহী নৌযানকে ডব্লিউটিসির সিরিয়াল অনুসারে চলাচল করতে হবে। তবে নৌ পরিবহন অধিদফতর থেকে বলা হয়েছিল, নিজস্ব লাইটার ভেসেলের পরও অতিরিক্ত নৌযানের প্রয়োজন হলে তা ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত হয়েই নিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে বছরে প্রায় ৪ কোটি টন পণ্য লাইটার ভেসেলের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং করা হয়। ডব্লিউটিসির নিয়ন্ত্রণাধীন দেড় হাজার এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন প্রায় আড়াই শ লাইটার ভেসেল রয়েছে। এর বাইরেও চার শর মতো ভাড়া করা জাহাজে কারখানা মালিকরা পণ্য আনা  নেওয়া করেন। ডব্লিউটিসির তালিকাভুক্ত ৮০ জন লোকাল এজেন্ট জাহাজের এজেন্ট এবং ৩২ জন পণ্য আমদানিকারকদের প্রতিনিধি হিসেবে পুরো ব্যাপারটি পরিচালনা করে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কোথাও ছন্দপতন হলে পুরো দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বহুলাংশে মুখ থুবড়ে পড়বে। উল্লেখ্য, খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী এবং সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো তাদের কাঁচামাল পরিবহনের সুবিধার্থে লাইটার ভেসেলগুলো কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত নৌযান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা পণ্য মূল্য সীমিত রাখতে সহায়ক হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর