শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

উন্নত প্রজাতির ভেড়া পালনে ভাগ্য বদল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

উন্নত প্রজাতির ভেড়া পালনে ভাগ্য বদল

খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এবং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাড়ল (উন্নত জাতের ভেড়া) পালনে আগ্রহ বেড়েছে খামারিদের। ভেড়ার একটি উন্নত প্রজাতি এ গাড়ল। এগুলো দেখতে প্রায় ভেড়ার মতো। দেশি ভেড়ার চেয়ে এটি আকারে বড়, মাংসও বেশি হয়। মাংসের চাহিদা মেটাতে দেশেই এখন বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে গাড়লের খামার। কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। অনেকে সফলতাও পেয়েছে। আবার গাড়ল (ভেড়া) পালন করে ভাগ্য বদল করে স্বাবলম্বী হয়েছে এলাকার অনেক বেকার যুবক। সরকারি সহযোগিতা ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠবে আরও অনেক গাড়লের খামার এবং মাংসের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বলেও মনে করেন এসব খামারি। খামারিরা জানান, একটি গাড়ল থেকে মাংস পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি। বছরে ৩ থেকে ৭টি বাচ্চা দেয় গাড়ল। এর মাংস খুব সুস্বাদু।

একটি পূর্ণ বয়স্ক গাড়লের বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ৮-৯ জন খামারি প্রায় ৬০০ গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালন করছে। তুলনামূলক গৃহপালিত অন্য প্রাণীর চেয়ে গাড়লের রোগবালাই কম হয় এবং দ্রুত মাংস বৃদ্ধি হয়, আবার এর মাংসে চর্বি কম থাকে। নবাবগঞ্জ উপজেলার ইসলামপাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক শাহিনুর রহমান সবুজ এই খামার করে ভাগ্য বদলেছেন। খামারি শাহিনুর রহমান সবুজ জানান, ২০১৯ সালে তিনি ১০টি গাড়ল ১৫টি ছাগল নিয়ে ‘সবুজ এগ্রোফার্ম নামে খামার শুরু করেন। এখন তার খামারে ৮০টি ভুটান ও ইন্ডিয়ান গাড়ল এবং ১২০টি রাজস্থানি, বিটল, যমুনাবারী ও তোতাপুরী প্রজাতির ছাগল রয়েছে। বছরে এখান থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। পাশাপাশি তার গরুরও খামার রয়েছে। গাড়লের মাংসের চাহিদা অনেক। ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় গাড়লের মাংস। এটি পালনে খেয়াল রাখতে হবে-যাতে ক্রিমি না হয়। এ জন্য তিন মাস পর পর ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া কোনো সমস্যা নেই। আরেক খামারি নবাবগঞ্জে গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী নবাবগঞ্জের তর্পনঘাট গ্রামের মো. রইচ উদ্দিন। খামারি মো. রইচ উদ্দিনের স্বল্প বেতনে ঠিকমতো সংসার চলত না। গাড়ল ভেড়া পালনেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। খামারি রইচ উদ্দিন জানান, গাড়ল ভেড়ার মাংস গন্ধমুক্ত সুস্বাদু। পুষ্টিগুণেও ভালো। দেশের দক্ষিণবঙ্গে এর মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি মাংস ৭ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। একজন খামারি ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে খরচ বাদে গাড়ল খামার থেকে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। মাঠে ছেড়ে দিয়ে প্রাকৃতিক খাবার যেমন মাঠের ঘাস, লতাপাতা খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে পালন করা যায়। রোগবালাই খুব কম। ফলে গাড়ল পালনে খরচও কম। তিনি বেকার যুবকদের চাকরির পেছনে না ছুটে গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ায় আহ্বান জানান। নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে নিয়মিত টিকাসহ সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানে ছোট-বড় ৮-৯টি গাড়লের খামার রয়েছে। শাহিনুর রহমান  সবুজ ও রইচ উদিনের খামার বড়। গাড়ল পালনে তেমন কোনো খরচ হয় না। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ার কারণে অনেকেই এই গাড়ল পালন করছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালনে চিকিৎসা সেবা, পরামর্শসহ সব প্রকার সহযোগিতা করছে খামারিদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর