রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনে ছিল প্রেমিক গ্রুপ

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনে ছিল প্রেমিক গ্রুপ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিকলবাহার কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগর। গাছগাছড়া দিয়ে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করেন। রোগী দেখেন। অল্প বয়সেই বেশ নামডাক হয়েছে তার। দিনে দিনে তার রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। কবিরাজি ছাড়াও ঝাড়ফুঁক দেন। মানুষের নানা সমস্যায় তিনি ঝাড়ফুঁক চিকিৎসাও করেন। তাবিজ দেন। এ ধরনের রোগীর সংখ্যাও তার অনেক।

এক দিন বিকালে কয়েক ব্যক্তি তার বাড়িতে এসে রোগী দেখানোর কথা বলে নিয়ে যান। রোগী দেখতে গিয়ে কবিরাজ সায়ের সেই দিন আর বাসায় ফেরেননি। পরে তার লাশ উদ্ধার হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত থেঁতলানো অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ চরলক্ষ্যার নামক স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। পরে হত্যার শিকার কবিরাজ সায়ের ভাই মো. বশির বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি গত বছরের ১৯ এপ্রিলের। কবিরাজের লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পুলিশকেও বেশ ভাবিয়ে তোলে। কেন কী কারণে কবিরাজকে হত্যা করা হলো, তা পুলিশের কাছে বড় এক প্রশ্ন। কারণ সায়েরের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পুলিশ পায়নি যে, খুন হয়ে যেতে হবে তাকে। স্থানীয়রাও কবিরাজের খুনটিকে মেনে নিতে পারছিল না। এলাকার দরিদ্র মানুষদের অল্প টাকায় চিকিৎসার স্থান ছিল এই কবিরাজ।  পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কবিরাজ খুনের             তদন্ত শুরু করে। কিন্তু খুন সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পুলিশ খুঁজে পায় না। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও এ ঘটনার তদন্ত করে। তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে খুনিদের শনাক্ত করতে সমর্থ হয়। পরে এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে কর্ণফুলীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো কর্ণফুলীর ইছানগর এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে মো. মহিউদ্দীন। কবিরাজ হত্যার মূল হোতা মহিউদ্দীন। মহিউদ্দীন একই এলাকার একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। সেই মেয়েটিও তাকে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু মেয়ের পরিবার মহিউদ্দীনকে মেনে নিতে রাজি নয়। তারা চেষ্টা করছিল মেয়েটিকে মহিউদ্দীন থেকে আলাদা করার। কিন্তু কোনোভাবেই মেয়েটিকে মহিউদ্দীন থেকে আলাদা করতে পারছিল না। পরে লোকমুখে জানতে পারে কবিরাজ সায়েরের কথা। মেয়ের পরিবার মহিউদ্দীন থেকে ফেরাতে কবিরাজ সায়ের মোহাম্মদ সাগরের দ্বারস্থ হয়। বিভিন্নভাবে সায়ের চেষ্টাও করে। কিছুদিন ঘরবন্দীও ছিল মেয়েটি। কিন্তু এক সময় মেয়েটি মহিউদ্দীনের সঙ্গে পালিয়ে যায়। তারা বিয়েও করে। পরে মেয়েটি কবিরাজের কথা জানায় মহিউদ্দীনের কাছে। মহিউদ্দীন ক্ষুব্ধ হয় কবিরাজের ওপর। এ থেকেই খুনের পরিকল্পনা। পরে তার ছোট ভাই আর বন্ধুদের নিয়ে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেম করত। যে কারণে এদের প্রেমিক গ্রুপও বলা হতো এলাকায়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর