রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের তথ্যও মুছে ফেলে ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্যও বদলে ফেলে ওরা। একজনের সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে অন্যের নামে। ভয়াবহ বিপাকে পড়ছেন প্রকৃত শিক্ষার্থীরা। এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার এলাকা থেকে এ চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবির ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন নূর রিমতি, মো. জামাল হোসেন, এ কে এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও মো. আবেদ আলী। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে এসএসসির বেশ কিছু নিবন্ধন কার্ড ও প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে একটি একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নাম ও বয়স সংশোধন-সংক্রান্ত পাঁচটি আবেদনপত্র। শিক্ষা বোর্ডের কয়েকটি খাম উদ্ধার করা হয়। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ভুক্তভোগী নূর তাবাসসুম সুলতানা ২০১৯ সালে ধানমন্ডি কামরুননেছা গভ. গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য শিক্ষা বোর্ডে দেওয়া মোবাইল         নম্বরে ২১ আগস্ট একটি খুদে বার্তা (এসএমএস) আসে। ওই বার্তায় তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর নাম ও পিতা-মাতার নামসহ জন্ম তারিখ পরিবর্তিত দেখতে পান ভুক্তভোগী। তখন তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পান। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এ মামলার তদন্ত শুরু করে ডিবি। ডিবির প্রধান বলেন, গ্রেফতার নূর রিমতি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট প্রয়োজন। জাল সনদ তৈরির জন্য তিনি তার মামা গ্রেফতার মো. জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ কে এম মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন ও মো. আবেদ আলীর সঙ্গে সমন্বয় করে নূর তাবাসসুমের সার্টিফিকেট-সংক্রান্ত জেএসসি ও এসএসসি পাসের সব তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরম্যাটে আবেদন করেন। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে নির্ধারিত ফরম্যাটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুমের তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নুর রিমতির তথ্য আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরে জন্ম তারিখও পরিবর্তন করে নেয় তারা। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংযোজিত তথ্যও প্রদর্শন করে। প্রতারক চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন সময় শিক্ষা বোর্ড থেকে যারা কৃতকার্য হয়েছেন, তাদের শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আর্কাইভে প্রবেশ করে ফলাফল যাচাই করে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে অবহিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর