রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রতিবাদ

শাহীন আনাম সিন্ডিকেট দায় এড়াতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগে জড়িতরা কেউই হিন্দুধর্মীয় গুরু কিংবা ধর্ম অনুসারী নন। তাই তাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন শাহীন আনাম। তিনি নিজেও এই অপচেষ্টার দায় এড়াতে পারেন না। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবাদ দিতে গিয়ে যারা সাফাই গেয়েছেন তারা অনেকেই এনজিও কর্মী, বিশেষ করে যারা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের এনজিও থেকে আর্থিক সহায়তাপুষ্ট। সুবিধাভোগীদের এই বিবৃতি সাধারণ হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্ব বহন করে না। পাশাপাশি যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা কেউই হিন্দুধর্মীয় গুরু নন। তাই তাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের সূত্র ধরে ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’র বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদে এমন পাল্টা জবাব দিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট ডেইলি স্টার পত্রিকায় হিন্দু মহাজোট ভুল তথ্য দেওয়ায় ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগের প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদের প্রতি হিন্দু মহাজোটের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে লেখা হয়েছে- ‘দেশে হিন্দু বাবা-মার সম্পত্তিতে সন্তানের সমঅধিকারের বিষয়ে আইন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তি ও সংগঠন নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা উল্লেখ করেছেন- ‘শাহীন আনাম মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, কিন্তু তিনি আইন প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত নন’ এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, কোয়ালিশনের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নন।

প্রতিবাদে হিন্দু মহাজোট নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ফউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে নিজেরাই উল্লেখ করেছেন ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ২০২০ এর খসড়া তৈরি করেছে নাগরিক উদ্যোগ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন হচ্ছে এই কোয়ালিশনের সচিবালয়।’ এই খসড়া আইন তারা আইনমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়ার জন্য একটা ওয়েবিনার করে। সে ওয়েবিনারে খসড়া উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায়, আইনটি উপস্থাপন করেন প্রোগাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস, সভা প্রধান ছিলেন শাহীন আনাম। আলোচনায় তারা বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন আইনের খসড়া প্রণয়নে সহায়তা করছে। ২০০৭ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে গঠন করা হয় ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি কোয়ালিশন। শুরু থেকেই এই কোয়ালিশনের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। গত ৩০ মার্চ এক গোলটেবিল বৈঠকেও প্রধান আলোচক ছিলেন শাহীন আনাম। তিনি আলোচনায় স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন এ বিষয়ে কাজ করেছে। আমাদের কাজ ছিল জনমত সৃষ্টি করা। সমাজের তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। হিন্দু পূর্ণাঙ্গ বিবাহ আইনের জন্য ১ লাখ নারীর সই সংগ্রহ করেছিলাম। তারপরও শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন করতে পারিনি।’

প্রথম আলো পত্রিকা ৬ এপ্রিল গোলটেবিল বৈঠকের বক্তব্য প্রকাশ করে। সেখানে প্রথম আলো বলেছে, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সাল থেকে সবকিছুর মূলে কাজ করছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। অতএব তারা নিজেরাই তাদের ওয়েবসাইটে এবং প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। যেখানে সব কাজ শাহীন আনামের পরিকল্পনায়, নির্দেশে, উপস্থিতিতে ও অর্থ সহযোগিতায় হচ্ছে, সেখানে তিনি তার দায় দায়িত্ব অস্বীকার করেন কীভাবে?

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এনজিওকে অর্থ সহায়তা দেয়। সুতরাং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে যারা অর্থ গ্রহণ করে তারাও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নির্দেশিত পথেই কাজই করবে, এটাই স্বাভাবিক। সহায়তা পাওয়া কয়েকটি এনজিও নাম যুক্ত করে শাহীন আনাম নিজের দায় এড়াতে পারেন না।

মাহফুজ আনামের ভূমিকা : বিবৃতিতে বলা হয়, মাহফুজ আনাম ডেইলি স্টার সম্পাদক। পত্রিকায় যা কিছু ছাপা হবে, আইন অনুযায়ী তার দায়দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ তার নেই। তার পত্রিকায় (৬ এপ্রিল ২০২১) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনার একটি জাতিগত, হিন্দু ধর্মবিদ্বেষী ও ধর্মীয় উসকানিমূলক ‘কল্পনারানীর জীবন ও সম্পদে হিন্দু নারীর সমানাধিকারের প্রশ্ন’ শিরোনামে একটি কল্পকাহিনি প্রচার করে। কল্পকাহিনিটি হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত করে। তিনি ১০-১২ বছর আগের কল্পনা রানীর কল্পকাহিনি লিখতে গিয়ে বলেছেন, ‘সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের ইস্যুটা নিয়ে কাজ করছে একটি বিশেষ ফোরাম, যে ফোরামে আমার সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জড়িত।’ সেখানে বেনুকা চৌধুরী ও শশীবালা দেবীর কাহিনিও তুলে ধরেছেন। কিন্তু কল্পনা রানী, বেনুকা চৌধুরী ও শশীবালা দেবীদের ঠিকানা বা কোনো সূত্র উল্লেখ করেননি। কল্পকাহিনিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিধিবিধান ও ধর্মশাস্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আবার মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নানা বিতর্কিত কর্মসূচি বাছ-বিচার ছাড়াই ফলাও করে প্রচার করে যাচ্ছে পত্রিকাটি। ঘটনাগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি মালার কাঠির মতো গাঁথা।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের বিবৃতিতে বলা হয়, বিবৃতিদাতার মধ্যে থাকা দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য রাশিয়ার একজন খ্রিস্টান মহিলাকে বিয়ে করেছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি হিন্দু ধর্ম ও বিধিবিধান পালন করেন না। উপরন্তু তিনি একজন অর্থনীতিবিদ, কোনো আইন বিশেষজ্ঞ কিংবা ধর্মীয় গুরু নন। এনজিও কর্মী এরোমা দত্ত, তিনিও হিন্দু ধর্ম পালনকারী কোনো ব্যক্তিত্ব নন। বিয়ে করেছিলেন একজন মুসলিমকে। ফিরোজ চৌধুরী, আবদুল কাইয়ুম এবং শাহীন আনাম হিন্দু বিধিবিধান অনুসরণকারী ব্যক্তি নন। হিন্দু আইনের ভালোমন্দ তাদের স্পর্শ করে না। সুতরাং হিন্দু ধর্মীয় বিধিবিধান বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। হিন্দু বিধিবিধান বিষয়ে কোনো সমস্যা হলে মতামত দেবেন বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাধু সন্যাসী, হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন, হিন্দু আইন বিশেষজ্ঞ ও হিন্দু সমাজ সেবকরা। প্রতিবাদলিপিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা কেউই হিন্দু ধর্মীয় গুরু কিংবা ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিত্ব নন। তাদের পরিচয় তারা এনজিও কর্মী। সুতরাং তাদের প্রতিবাদলিপি হিন্দু সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

হিন্দু মহাজোট অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছে, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মাহফুজ আনাম ও অ্যাঞ্জেলা গোমেজকে অবশ্যই হিন্দু সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় হিন্দু ধর্ম, বিধিবিধান ও শাস্ত্র অবমাননা, হিন্দু পরিবারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সারা দেশে গণস্বাক্ষর করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও বাঁচতে শেখার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানানো হবে। হিন্দু মহাজোট জুতা ও ঝাড়ুু মিছিল সহযোগে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন অফিস ঘেরাও করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সারা দেশে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডেইলি স্টার তথা মাহফুজ আনামকে অনুরোধ করব, তিনি যেন ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করেন। আমরা লক্ষ্য করেছি, ২৪ আগস্টও তিনি একটি বিতর্কিত লেখা প্রকাশ করেছেন। তিনি এই ষড়যন্ত্র থেকে নিবৃত্ত না হলে জুতা-ঝাড়ু মিছিলের গন্তব্য ডেইলি স্টারমুখী হতে বাধ্য হবে।

সর্বশেষ খবর