সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পাঁচজন

মির্জা মেহেদী তমাল

তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পাঁচজন

পাঁচ মাসের শিশু ইভাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় আসামিও করা হয়। কিন্তু পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারে না। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ চার বছরে তিনবার তদন্ত করে। প্রতিবারই চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় সংস্থাগুলো। অবশেষে পাঁচ বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উদঘাটন করে পাঁচ মাসের শিশু ইভা হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে। পাঁচ বছর পর জানা যায় ইভার খুনি কে। ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের মুক্তার মিয়ার ছেলে নিজাম মিয়া (৩৭) ও তার ভাইদের সঙ্গে একই গ্রামের মাসুক মিয়া (৪৫) ও তার ভাইদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ হয়। এ বিরোধের সময় নিজাম মিয়ার স্ত্রী রুবিনা বেগম তার কন্যা ইভাকে কোলে নিয়ে বিরোধীয় জমিতে গিয়ে বাধাদানসহ চিৎকার শুরু করেন। তাদের প্রতিপক্ষ মাসুক মিয়া ও তার লোকজন রুবিনা বেগমকে এ সময় মারপিট করে। এদিকে নিজামের মা বিরু বেগম নিজামের পাঁচ মাসের শিশু ইভাকে কোলে নিয়ে এসে চিৎকার করে বলতে থাকেন, মাসুক মিয়ারা ইভাকে খুন করেছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শিশুটির সারা দেহ ছিল রক্তে রঞ্জিত। বিরু বেগম উপস্থিত লোকজনকে বলেন, মাসুক ও তার লোকজন শিশু ইভাকে হত্যা করেছে। ভয়ে মাসুক মিয়া ও তার লোকজন বিরোধীয় জমি থেকে চলে যান। তারা পালিয়ে বাঁচেন। সংবাদ পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আহত রুবিনা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন রাতেই নিহত শিশু ইভার বাবা নিজাম মিয়া বাদী হয়ে মাসুক মিয়া ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

কুলাউড়া থানার এসআই শ্যামল বণিক ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট থেকে ওই বছরের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি বদলি হয়ে গেলে এসআই দেলোয়ার হোসেন ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি  পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি বদলি হয়ে গেলে এসআই দেলোয়ার হোসেন ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তের সময় হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন। চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদী নিজাম মিয়া নারাজি দিলে মামলাটি ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কুলাউড়া থানার এসআই মো. ওয়াসিম আল বারী তদন্ত করেন। এই তদন্ত কর্মকর্তাও চূড়ান্ত রিপোর্ট দেন।

বাদী নিজাম মিয়া আবারও নারাজি দিলে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখাকে নির্দেশ দেয় তদন্ত করতে। জেলা গোয়েন্দা শাখা, মৌলভীবাজারের এসআই মো. মোবারক হোসেন ২০১৪ সালের ১০ জুন থেকে ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। তিনিও হত্যাকান্ডে কে বা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন। আগের তদন্ত কর্মকর্তার ন্যায় তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন। চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদী নিজাম মিয়া আবারও নারাজি দিলে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মৌলভীবাজারকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিবিআই, মৌলভীবাজারসহ তিনি মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মামলার তদন্তকালে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশে নিজেরাই বাদীর শিশুকন্যা ইভাকে হত্যা করে থাকতে পারে সন্দেহ হয়। হত্যাকান্ডের প্রধান সন্দেহভাজন ও এজাহারনামীয় সাক্ষী বাদীর ভাই নিহত শিশু ইভার চাচা আবুল মিয়া ওরফে আবুল্লাকে (৩৩) ওই বছর গত ১১ জুলাই সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে। আবুল্লা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে। পরের দিন ১২ জুলাই তাকে আদালতে সোপর্দ করলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আবুল মিয়া ওরফে আবুল্লা জানায়, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার উদ্দেশে তার মা বিরু বেগম (শিশু ইভার দাদি) তার ভাতিজি ঘুমন্ত শিশু ইভাকে উঠানে রেখে বঁটি দিয়ে কোপ দিতে বলে। তখন উঠানে তার ভাই নিজাম ও রাশেদ উপস্থিত ছিল। সে শিশু ইভার গলায় কোপ দিলে  ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। তখন তার মা পানি ঢেলে ঘটনাস্থলের রক্ত পরিষ্কার করে। এরপর লাশ হাতে নিয়ে বিরোধীয় জমির দিকে যায়। পিবিআই মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম উদ্দিন জানান, এই শিশুটিকে তার চাচা হত্যা করেছে। হত্যার কারণ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর