সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্যা উৎকণ্ঠা ১২ জেলায়

যমুনাসহ সাত নদীর ১৫ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে ১২ জেলায়। এতে বাড়ছে পানি। বাড়ছে দুর্ভোগ। এ ছাড়া যমুনাসহ সাত নদীর ১৫ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ ও সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, পোড়াবাড়ী, মথুরা ও আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধলেশ্বরীর পানি এলাসিন, আত্রাইয়ের পানি বাঘাবাড়ী, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম এবং দুধকুমার নদীর পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে যমুনা নদীর পানি সমতলবৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি কমছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। এই পানি বৃদ্ধির ধারা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার কুশিয়ারা ছাড়া প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলেও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

বাড়ছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে পানির মধ্যেই মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। টয়লেট তলিয়ে যাওয়ায় নারীরা চরম কষ্টে পড়েছে। চুলা তলিয়ে যাওয়ায় রান্না নিয়ে বিপাকে পড়েছে। সারাক্ষণ পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের চরম ক্ষতি হয়েছে। ঘরের বেড়া আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুকনো ও শিশু খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গো-খাদ্যের সংকট  দেখা দিয়েছে।

যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে : উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে গেল ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও পানি বৃদ্ধির ফলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরী, লৌহজং, বংশাই ও ঝিনাই নদীর পানি। স্থানীয়রা জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চলসহ টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন গ্রাম বন্যার কবলে পড়ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। এদিকে নদী তীরবর্তী এলকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনেকেই গবাদিপশুসহ উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। বসতভিটায় পানি ওঠায় বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ বানবাসিদের। কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে সামান্য কমলেও রবিবার বিকাল পর্যন্ত ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় পাউবো জানায়, ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে সামান্য কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ ছাড়া কমেছে তিস্তা ও দুধকমারসহ অন্যান্য নদীর পানিও। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী জীবন-যাপন করছেন চর ও দ্বীপচরসহ নদীতীরের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে নদ-নদীর অববাহিকাসহ নিচু এলাকার ১০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমির ফসল ও বীজতলা। এর মধ্যে রোপা আমনই তলিয়ে গেছে ৯৮৫ হেক্টর জমির এবং বীজতলা ৬০ হেক্টর ও ৮৫৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন জাতের সবজি খেত।

তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে, কমছে : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বৃদ্ধি পেলেও সকাল ৯টার পর থেকে কমতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। গতকাল সকাল ৬টায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া খালিশা চাঁপানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকলেও সকাল ৯টায় বিপৎসীমা বরাবর, দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং বেলা ৩টার পর থেকে ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এদিকে ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী, টেপাখড়িবাড়ী ও খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর