সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পাল্টাপাল্টি মিছিল স্লোগানে উত্তপ্ত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পক্ষে সম্পাদকের বিবৃতি দেওয়ায় পাল্টাপাল্টি মিছিল-স্লোগানে গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণ। মিছিল আর স্লোগানের মধ্যেই পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন আইনজীবী সমিতির আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি নেতারা। বার সম্পাদকের কর্মকান্ডে নিন্দা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেলও।

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে বিবৃতি দেন বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ঘটনার পর শনিবারই আইনজীবীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এর মধ্যে বারের প্যাড ব্যবহার করে একই ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন কাজল। ফলে  গতকাল সকাল থেকেই দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। গতকাল বেলা ১টা ১০ মিনিট থেকে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা নিজ নিজ দলের পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের টানা মিছিল ও স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।

এর মধ্যেই ১টা ২৫ মিনিটে সমিতির সম্পাদকের কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপিপন্থি সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। কাজল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অসামান্য অবদান একটি মীমাংসিত সত্য। তার মতো একজন বীর সেনানী ও সফল রাষ্ট্রনায়কের চরিত্রে কালিমা লেপনের যে অপচেষ্টা অতিসম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক এবং ইতিহাসের মীমাংসিত সত্যের বিকৃতি। এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাই।’

এরপর আইনজীবী সমিতির আওয়ামীপন্থি সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহর নেতৃত্বে দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মদ শফিক উল্লাহ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাড ব্যবহার করে সম্পাদকের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তা নিতান্তই বিভ্রান্তি সৃষ্টি জন্য। এটা সম্পাদকের ব্যক্তিগত বক্তব্য, আইনজীবী সমিতির নয়।’

তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে আইনজীবী নেতারা নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনকে কখনই রাজনৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি। দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সব সময় তারা ছিলেন বদ্ধপরিকর ও আপসহীন। অথচ আজ সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাড ব্যবহার করে নিজ রাজনৈতিক দলের মত প্রকাশ করার মতো সস্তা রাজনীতি করে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘদিনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চক্রান্ত শুরু হলো।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন কান্ড আবার করা হলে কঠোর আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।’ পরে এ বিষয়টি নিয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত অনেক সদস্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখানে সভাপতি-সম্পাদক হয়ে থাকেন। ইতিপূর্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘বারের প্যাড ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার কারণে অন্য সবাই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আমাদের বারের সম্প্রীতি রক্ষার যে ঐতিহ্য, এর মাধ্যমে তা বিনষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ একত্রে চলাফেরা করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়, এমন কাজ করা কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

সর্বশেষ খবর