মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বাড়ছে পানি বাড়ছে ভাঙন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ছে পানি বাড়ছে ভাঙন

রাজবাড়ীতে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দিন দিন বাড়ছে নদীন পানি। দেশের ১০৯ পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৪টিতে পানি বেড়েছে। কমেছে ৪৪ স্টেশনে। আর গতকাল দেশের ছয় নদীর ১৩ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে, যমুনা নদীর পানি বাড়ছে বেশি। এই নদীর ৮ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

এ ছাড়া আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে অনেক জেলার নিম্নাঞ্চল। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এবং ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে গতকাল জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বাড়তে পারে ব্রহ্মপুত্র নদ, পদ্মা, মনু ও খোয়াই নদীর পানি। এ ছাড়া যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বাড়তে পারে। তবে গঙ্গা নদীসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজার স্টেশনে ৯৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া মনু রেলওয়ে ব্রিজে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে উজানে ভারতের স্টেশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আইজলে বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। এ ছাড়া দার্জিলিংয়ে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে, দেশের বিভিন্নস্থানে বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতির তথ্য পাঠিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।

রংপুর : তিস্তার পানি বাড়া-কমার সঙ্গে নদীভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন গঙ্গাচড়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ। গত এক মাসে তিস্তার ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের মানচিত্র পাল্টে গেছে। সেখানে বসবাসরত তিন শতাধিক পরিবারের আবাদি জমি ও গাছপালাসহ বসতভিটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া সেখানকার প্রায় এক হাজার পরিবারসহ মটুকপুর, চিলাখাল, সাউদপাড়া, কুড়িবিশ্বা, ইচলী, পাইকান হাজীপাড়া, মিনার বাজার, ছালাপাক, মর্নেয়া চরসহ নিম্ন এলাকার প্রায় চার হাজার পরিবার গত দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী। লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী এলাকায় ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি। ভাঙন অব্যাহত থাকায় বিনবিনার পাকা রাস্তাসহ স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত চার কিলোমিটার বেড়ি বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে তিস্তার পানি ঢুকে গ্রামটির প্রায় এক হাজার পরিবার ১৫ দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলীমা বেগম জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে টিনসহ আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলা সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালীর নিম্নাঞ্চলের বসতভিটা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। বন্যা কবলিতদের মধ্যে নিরাপদ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে আউশ ধান ও পাট এবং সবজি খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অন্যদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, ইতিমধ্যে পাঁচটি উপজেলায় ৮০ টন চাল ও প্রতি ইউনিয়নে ৭০ হাজার করে টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাঘটের পানি ৮ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি বেড়েছে ২২ সেন্টিমিটার। তবে ব্রহ্মপুত্র ছাড়া অন্যসব নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

শরীয়তপুর : পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে শরীয়তপুরের বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলায় বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে পানি বৃদ্ধিতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর