শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এনজিও সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে মাহফুজ আনাম

হিন্দু আইন সংস্কারে রাজধানীতে কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এনজিও সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে মাহফুজ আনাম

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল হিন্দু পারিবারিক আইন সংশোধন প্রতিরোধ আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মানববন্ধন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হিন্দু আইন সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে গতকাল রাজধানীতে বেলা ১১টায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে পৃথক দুটি সংগঠন। আইন সংস্কার না করার জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ‘হিন্দু পারিবারিক আইন সংশোধন প্রতিরোধ আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’। বক্তারা বলেন, এসব ষড়যন্ত্রের মূল হোতা মাহফুজ আনাম ও তার স্ত্রী শাহীন আনাম। তারা অনেক দিন ধরেই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। একই সময়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আইন সংস্কারের পক্ষপাতী বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, শিশু প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক হিন্দু আইনের আধুনিকায়ন অনিবার্য।  

হিন্দু পারিবারিক আইন সংশোধন প্রতিরোধ আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ : পরিষদের নেতারা মানববন্ধনে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার বছরের ঐক্য এবং ঐতিহ্য বিলীন করে হিন্দুদের ঘরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। আর তার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন মাহফুজ আনাম। তারা বলেন, অবিলম্বে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছেন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এই আইনের কোনো পরিবর্তন চান না। কিছু ধর্মত্যাগী আইন পরিবর্তনের পক্ষে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। তারা না ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। 

বক্তারা এনজিওওয়ালাদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর সরকার বলেন, হিন্দু আইন সংস্কারের জন্য যে কমিটি গঠন হলো, এই কমিটি হিন্দুদের সংগঠন নয়, এগুলো এনজিওদের চক্রান্ত। অতীতে তাদের কোনো কর্মকান্ড আমরা দেখিনি। হিন্দুরা যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে এদের সামনে রেখে এনজিওগুলো খেলতে চাইছে। আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এসব ষড়যন্ত্রের মূল হোতা মাহফুজ আনাম ও তার স্ত্রী শাহীন আনাম অনেক দিন ধরেই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। শাহীন আনাম তার এনজিওর মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিওকে টাকা দিয়ে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ তৈরির কাজ করছেন। তাদের স্বপ্ন পূরণ হতে দেবে না হিন্দুরা। হিন্দু সম্প্রদারের লোকজন ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। কিছু ধর্মত্যাগী লোকের লক্ষ্য হচ্ছে সামনে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি ঘোলা করা। ওরা জানে হিন্দুরা ঐতিহ্যগতভাবেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, আইন সংস্কারের মাধ্যমে হিন্দুদের কাছে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে ভোটব্যাংকে ফাটল ধরানো। তিনি বলেন, আমরা মাহফুজ আনাম ও শাহীন আনামকে আলটিমেটাম দিয়েছিলাম ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তারা সেই সুযোগ গ্রহণ না করে উল্টো নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। এখন আর ছাড় দেওয়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। পূজা উদযাপন পরিষদের সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট বিনয় কুমার ঘোষ বলেন, এক-এগারোর সেই চক্রের শীর্ষে ছিলেন মাহফুজ আনাম। তিনি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, চক্রান্ত থেমে নেই, নিজের স্ত্রীর মালিকানাধীন এনজিওকে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছেন তিনি। মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন হিন্দুদের মধ্যে সংঘাত তৈরির চেষ্টা করছে। এই এনজিওটির সঙ্গে আরও কিছু এনজিও যুক্ত হয়েছে। এনজিওদের কোনো মতেই ছাড় দেওয়া হবে না। সারা দেশে জনমত গঠন করা হবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বক্তারা বলেন, দুটি এনজিও এবং কিছু কুচক্রী মহল হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে এসব অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অবিলম্বে এসব এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যে আইন হিন্দু সম্প্রদায় চায় না সেই আইন তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে একটি মহল। আমাদের এই প্রতিবাদ শুধু প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, খুব দ্রুত সারা দেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মহানগর পূজা উদযপান পরিষদের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুশান্ত বসুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট লাকী বাছার, অ্যাডভোকেট প্রতিভা বাকচী, অ্যাডভোকেট শঙ্কর দাস প্রমুখ।

হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ : সংবাদ সম্মেলনে এই পরিষদের বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত প্রথাগত হিন্দু আইনে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নানাভাবে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এ আইন সংস্কার করে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সভাপতি ড. ময়না তালুকদার। তিনি বলেন, ভারত, নেপাল, মরিশাসেও হিন্দু আইন সংস্কার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকার হিন্দু আইন সংস্কারের কাজে হাত দেয়নি। সংবিধানে বলা আছে, মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনো আইন থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। কিন্তু প্রচলিত হিন্দু আইনে নারী, প্রতিবন্ধী বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উত্তরাধিকার আইনে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, অভিভাবকত্ব আইনে মা-বাবার সমান অধিকার, দত্তক আইন সংস্কার, বিবাহবিচ্ছেদ আইন প্রণয়ন এবং বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার দাবি জানায় এই পরিষদ। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সঙ্গে অধিকার ও সম্পদের প্রশ্ন এবং অর্থনীতি জড়িত। কেউ যদি কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য কারও অধিকারকে অস্বীকার করতে চায়, তা রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী রীনা রায় বলেন, আজ ৩ সেপ্টেম্বর সিডও দিবস। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের দিবস এটি। সিডও সনদে বলা আছে, নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আইন বাতিল বা সংস্কার করতে হবে। কিন্তু এত বছর পরও এখন পর্যন্ত পারিবারিক আইনের বৈষম্য দূর করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘হিন্দু জনগোষ্ঠী এক সুরে কথা বলছে না। সবাইকে এক হয়ে এই আইন সংস্কার করতে হবে।

সর্বশেষ খবর