শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাগরে ৩ হাজার কোটি টাকার মাছ আহরণ হুমকির মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার ধাক্কায় দেশের সমুদ্রের সুনীল অর্থনীতি। জাহাজে সাগরের মাছ আহরণের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অর্থনীতিকেই বলা হয় সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনোমি)। এ খাতে নিয়োজিত জাহাজ শিল্প খাত করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত। গত দেড় বছরে চলতি মহামারীসহ নানাবিধ আওতাবহির্ভূত কারণে আর্থিক সংকটে ভুগছেন মাছ ধরা জাহাজ বা ফিশিং জাহাজের মালিকরা। হুমকির মুখে পড়েছে বার্ষিক ৩ হাজার কোটি টাকার সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সুনীল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত সমুদ্র জাহাজ শিল্প। এ জাহাজের মাধ্যমেই গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করা হয়। করোনাকালীন লকডাউনের কারণে যা ২০২০ সালে প্রায় বন্ধ ছিল। চলতি বছর কিছু জাহাজ সমুদ্রে গেলেও তার সংখ্যা খুবই কম। এখনো পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। করোনার কারণে জাহাজে নাবিকদের যেতে অনীহা, জাহাজের পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের অনিয়ন্ত্রিত সুদ, সরকারি প্রণোদনা না পাওয়া ইত্যাদির পরিণতিতে জাহাজ কোম্পানিগুলো মারাত্মক তারল্য সংকটে ভুগছে। এ ছাড়া, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে অনুপ্রবেশকারী ট্রলার, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন দেশীয় জাহাজের অবিরাম মাছ শিকার এবং একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট জাহাজিদের আহরিত মাছ নামমাত্র মূল্যে কিনে ফেলছে, ফলে জাহাজ মালিকরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জাহাজের সংখ্যা ২৫৮টি। এসব ফিশিং জাহাজ বছরে গড়ে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন মাছ ধরে থাকে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএফএ) প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএমএফএর সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। যার একটি বড় অংশ ব্যাংক ঋণ। গত দেড় বছরে করোনা মহামারীর কারণে পুরো খাতের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বকেয়া হয়ে গেছে। এ বকেয়া অর্থের সুদের পরিমাণ ১৩৫ কোটি টাকা। অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনে বলা হয়, বকেয়া সুদ মওকুফ করে ৫ শতাংশ হার সুদে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি সুবিধা প্রদান করলে সুনীল অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। জানতে চাইলে বিএমএফের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরো বছরে স্বাভাবিক সময় সর্বোচ্চ ১৭০ দিন মাছ আহরণের সুযোগ থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মৎস্য প্রজননকালীন সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ২০০ দিনের মতো বন্ধ থাকে। অথচ ব্যাংকের  শর্তাবলির কারণে আমাদের ৩৬৫ দিনের (পুরো বছরের) ঋণের সুদ গুনতে হয়। আমরা সাগর থেকে মাছ আহরণের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের আমিষের চাহিদা মেটাই। করোনা মহামারীর এ চরম সময় আমরা কোনো সুবিধা পাইনি। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জাহাজ শিল্প খাতকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হলে অন্যান্য শিল্প খাতের মতো নীতি-সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর