শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক বীমা করতে হবে

অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইডরার চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শিল্পখানায় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইন মেনে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি লিখে এ বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) গত ৩ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, শ্রম আইনে উল্লেখ থাকলেও দেশের অধিকাংশ শিল্প এবং কল-কারখানায় বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু হয়নি। বিধান পরিপালন না করার ফলে আইনের মূল উদ্দেশ্য তথা শ্রমিকদের স্বার্থ যথাযথ সংরক্ষিত হচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাম্প্রতিক একটি জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে প্রায় অর্ধশত শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে  ইডরার চেয়ারম্যান  ড. এম মোশাররফ হোসেন চিঠিতে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিককালে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। অঙ্গহানিসহ স্বাস্থ্যগতভাবে অক্ষম হয়ে গেছেন অনেক শ্রমিক। এরফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। উপরন্তু নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে আর্থিক সহায়তা দিতে হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সরকারের জন্য বিব্রতকর এবং জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় মালিকপক্ষও আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত শ্রম আইনের ৯৯ (১) ধারা অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০০ স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য মালিকপক্ষ গ্রুপবীমা নিশ্চিত করবেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইডরা চাইছে, আইনের এই ধারাটি প্রতিপালনে কর্মকৌশল নির্ধারণের জন্য যেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হয়। ইডরা মনে করছে, শিল্প-কারখানায় বাধ্যতামূলক বীমা নিশ্চিত করা হলে মালিক ও শ্রমিক উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। শিল্প-কারখানায় কোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার কারণে যখন শ্রমিকদের জীবনহানি বা স্বাস্থ্যঝুঁকি ঘটে-তখন সবাই মালিকপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। গ্রুপবীমা নিশ্চিত করতে পারলে শ্রমিকদের জন্য এই ক্ষতিপূরণ করবে বীমা কোম্পানিগুলো। এতে মালিকপক্ষের যেমন আর্থিক দায়ভার কমবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারগুলোও সংকট উত্তরণের সুযোগ পাবেন। এ বিষয়ে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে,  গ্রুপ বীমা চালুর পর দুর্ঘটনা কবলিত শিল্প-কারখানার মালিকদের আর্থিক দায়ের সিংহভাগ জীবনবীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাহ করা সম্ভব। উপরন্তু গ্রুপ বীমা নিশ্চিত করার কারণে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের ফলে কোম্পানির প্রতি শ্রমিকদের যেমন দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে, তেমনি উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।

সর্বশেষ খবর