রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কাটছে না সীমানা জটিলতা

আগামী সংসদ নির্বাচন বর্তমান অবস্থানেই করার সুযোগ থাকছে, আদালতে আছে মামলা অনেক এলাকার আসন পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের

গোলাম রাব্বানী

কাটছে না সংসদীয় আসনের সীমানা জটিলতা। পুরনো সীমানা বহাল রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ থাকছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের নতুন আইনে। বিশেষজ্ঞারা বলছেন, এটা বাস্তবতার নিরিখে হয়নি। কেননা সীমানা জটিলতা নিয়ে অনেক মামলা-অভিযোগ দীর্ঘদিন জমা পড়ে ছিল। সেদিকে নজর রাখবে নির্বাচন কমিশন। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক এলাকার আসন পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংদসীয় আসনের সীমনা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। কেননা এখনো অনেক আসনের সীমানা ৯০ কিলোমিটার রয়েছে। তিন-চারটি উপজেলা নিয়েও রয়েছে একটি আসন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখন্ডতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ৬২টি আসন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো আসনের জনসংখ্যার তারতম্য ২৫ শতাংশের বেশি। এ আসনগুলোর পরিবর্তন এসেছিল ২০০৮ সালে। পরে আসনের সীমানায় তেমন পরিবর্তন আসেনি।

উল্লেখ্য, ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল, ২০২১’ গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। বিলে বিদ্যমান আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা আছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে বিদ্যমান আইনগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদের আগে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনটিও সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তা না হওয়ায় বিদ্যমান আইনেই সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ওই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি না এ আইন সংশোধনের খুব একটা প্রয়োজনীয়তা ছিল কারণ বিদ্যমান  আইনের মধ্যে অপশন দেওয়া ছিল নির্বাচন কমিশনকে।’ এ আইন সংশোধন বাস্তবতার নিরিখে হয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘এর দরকার ছিল না। বিদ্যমান আইনে রয়েছে- নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে কোনো কারণে এটা করা যাচ্ছে না তাহলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটা সার্টিফিকেট দেবেন কেন এটা করা গেল না।’ তিনি বলেন, ‘দৈব-দুর্বিপাক বলতে কোনটা বোঝাচ্ছে? এটা কি মহামারীর দৈব-দুর্বিপাক? এটা কেন করা হয়েছে আমি জানি না। ইসি বলতে পারবে কেন এ আইন পাস করতে দিল। এ দৈব-দুর্বিপাকের ব্যাখ্যা কে দেবে?’

সংদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আইন সংশোধন : নির্বাচন কমিশনকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল, ২০২১’ গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। বিদ্যমান আইনের আটটি ধারার স্থলে নতুন আইনে নয়টি ধারা থাকছে। নতুন ধারাটিতে নির্বাচন কমিশনকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বিদ্যমান আইনে নেই। আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে নতুন আইনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিতসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্তসংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখন্ডতা বজায় রাখা এবং আদশশুমারির ভিত্তিতে যত দূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। বিলে বিদ্যমান আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা আছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

নির্বাচনী আসনের সীমানা পরিবর্তনে সর্বশেষ বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছিল ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন ১৩৩টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার পর ২০১৩ সালে জেলার আসন সংখ্যা ঠিক রেখে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর