সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ছয় শব্দের একটি চিরকুট

মির্জা মেহেদী তমাল

ছয় শব্দের একটি চিরকুট

খাদিজা আক্তার পিংকি কদিন হলো বাপের বাড়ি এসেছেন। তার দুই মাস বয়সী শিশুসন্তান ইমাম হোসেনকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। এক দিন সন্তানকে পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন পিংকি। ঘুম ভাঙতেই দেখেন তার পাশে শিশুসন্তান নেই। তিনি খাটের ওপর, বালিশের পাশে এবং খাটের নিচে খুঁজতে থাকেন। ঘরের ভিতর খাটের ওপর থেকে তার শিশুকে কেউ চুরি করেনি তো? এমন অজানা আশঙ্কায় তিনি চিৎকার করে ওঠেন। চিৎকারে তার বাবা জাবেদ আলী, মা-ভাই-বোন ছুটে আসেন। পিংকি চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমার বাচ্চাকে পাচ্ছি না। সবাই অবাক। ঘর থেকে কে বাচ্চাকে চুরি করবে? বাড়ির সবাই দুই মাসের শিশুটিকে খোঁজ করতে থাকে। খবর পেয়ে পিংকির স্বামী রুবেল ছুটে আসেন শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু কোথাও তাদের শিশুসন্তানকে খুঁজে পায় না। সবার ধারণা, দুই মাস বয়সী ইমাম হোসেনকে চুরি করে নিয়ে গেছে কেউ। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ  জেলার বন্দরের ১ নম্বর মাধবপাশা এলাকার। ঘটেছে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল রাতে।

পরদিন ২১ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে খাদিজা আক্তার পিংকিদের বসতবাড়ির পাশে পুকুর থেকে তার ছেলের লাশ উদ্ধার হয়। এ বিষয়ে শিশুটির বাবা রুবেল বন্দর থানায় মামলা করেন।

মামলা দায়েরের পর বন্দর থানা পুলিশ মামলা তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে না পারায় দায়িত্ব দেওয়া  হয় পিবিআইকে। পিবিআইর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সার্বিক সহযোগিতায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আলম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।

২০২০ সালের ৩০ জুলাই থেকে মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। নিবিড় তদন্তকালে ঘটনাস্থল থেকে ছয় শব্দের একটি ছোট কাগজের টুকরা আলামত হিসেবে জব্দ করেন। জব্দকৃত কাগজে লেখা ছিল “বাচা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথাব”। কাগজের হাতের লেখার বিষয়ে ঘটনাস্থল বসতবাড়িসহ আশপাশের লোকজনের নমুনা লেখা সংগ্রহ করে পর্যালোচনার এক পর্যায়ে পুুলিশ নিশ্চিত হয়, এটি পিংকির হাতের লেখা। হাতের লেখার মিল পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল খাদিজা আক্তার পিংকিকে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অফিসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার স্বামী তাকে বারবার টাকার জন্য চাপ দিতেন। স¦ামী চাইতেন খাদিজা আক্তার পিংকি তাকে কামাই করে খাওয়াবেন। তিনি বাবার বাড়িতে আসার পর স¦ামী তার কোনো ভরণ-পোষণ দিতেন না। এটা নিয়ে তার পরিবারের লোকজন তাকে উপহাস করত। তাই তিনি চাপ সহ্য করতে না পেরে ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ঘুমন্ত ছেলে ইমাম হোসেনকে (২ মাস) কোলে নিয়ে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে দেন। উল্লিখিত বিষয়ে ৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে নিজ দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তিনি কী লিখেছিলেন এমন প্রশ্নে পিংকি জানান, তিনি স্বামীর ওপর রাগ করে শিশুকে হত্যার পর একটি কাগজে লিখেছিলেন। বাচ্চাকে ঘরে ঘরে চুরি করে খাওয়াবেন। 

চাঞ্চল্যকর ওই মামলায় ঘাতক গর্ভধারিণী মা খাদিজা আক্তার পিংকি ৫ সেপ্টেম্বর রবিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে নিজ দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। স্বীকারোক্তিতে খাদিজা আক্তার পিংকি আদালতকে জানিয়েছেন স্বামী ভরণপোষণ না দেওয়ায় এবং পরিবারের লোকজনের উপহাস সহ্য করতে না পেরে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ঘুমন্ত ছেলে ইমাম হোসেনকে কোলে নিয়ে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে হত্যা করেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর