বন্যাপ্রবণ নদ-নদীগুলোর পানির সমতল দুই দিন ধরে হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে। যমুনা-পদ্মার পানিও কমেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো পানিবন্দী অনেক মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবারের মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বর্তমানে নয়টি নদী ১৭টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলো হলো- ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তুরাগ, কালিগঙ্গা, পদ্মা, আত্রাই, ধলেশ্বরী ও মুহুরী।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-ফরিদপুর : টানা এক সপ্তাহ ধরে ফরিদপুরে পদ্মার পানি বাড়লেও এক দিনে পানি কমেছে ৫ সেন্টিমিটার। তবে এখনো তা বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত এক মাসের অধিক সময় ধরে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী থাকায় তাদের দুর্ভোগ এখন চরমে। বানভাসী মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকট চলছে। এ ছাড়া পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ফরিদপুরের সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থচ্যানেল, সদরপুরের চর নাসিরপুর, ঢেউখালী, আকটের চর, চরভদ্রাসনের সদর, চরহরিরামপুর, ঝাউকান্দা, আলফাডাঙ্গার গোপালপুরসহ বেশ কিছু ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।
রংপুর : রংপুরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহে তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কয়েক শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যায়। গঙ্গাচড়ায় বেড়িবাঁধ, পাকা রাস্তা, স্বেচ্ছাশ্রম বাঁধ, চরের চলাচলরত রাস্তা, ব্রিজ ভেঙে গেছে। পীরগাছায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছেন।
ফেনী : গত দুই দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর বাঁধের দুটি অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ফুলগাজীর পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রবিবার রাতে জেলার ফুলগাজী উপজেলা সদর ইউনিয়নের জয়পুর ও ঘনিয়ামোড়া এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, নদীর পানির তীব্র স্রোত রয়েছে। পানি নামলে বাঁধ সংস্কার করা হবে।
রাজবাড়ী : দ্বিতীয়বারের মতো কমতে শুরু করেছে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর পানি। ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে পদ্মার পানি। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ার কারণে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। পানি হ্রাস পেলেও এখনো বিশুদ্ধ পানি সংকট ও খাদ্য সংকট রয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি গত তিন দিন থেকে একটানা কমে সবগুলোই বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচে চলে গেছে। ঘাঘট নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে করতোয়ার পানি কমেছে ১০ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি কমেছে ৫ সেন্টিমিটার। তবে করতোয়া ও তিস্তা গত ১০ দিন থেকেই বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে টানা এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। তবে তা ধীরে। গতকাল পানির স্তর ছিল ১৭.০৯ মিটার। এর আগে গত মঙ্গলবার বিকালে পানির স্তর ছিল ১৬.৮৩ মিটার, বুধবার ১৬.৮৯ মিটার, বৃহস্পতিবার ১৬.৯৪ মিটার, শুক্রবার ১৬.৯৭ মিটার, শনিবার ১৭.০১ মিটার, রবিবার ১৭.০৭ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গতকাল দুপুরে ধরলা নদীর পানি অনেকটা কমে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে রাজারহাট উপজেলায় তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙন প্রতিরোধে ও নদী সংস্কারে সরকারের দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।