মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

২৯ বছর পর হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের মিঠাপুকুরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২৯ বছর পলাতক ছিলেন। পরিচয় প্রকাশ পায়, এ ভয়ে গ্রাজুয়েট হয়েও কোনো চাকরিতে আবেদন করেননি। জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন মো. আজাদ মিয়া। বেশির ভাগ সময় দিনমজুর, সর্বশেষ রাজমিস্ত্রি হয়ে দিনকাল ভালোই কাটছিল। বয়স ৫০ পেরিয়েছে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি সেই আবুল কালামের। তার নির্ঝঞ্ঝাট-নির্বিঘ্ন জীবনে বাদ সেধেছে র‌্যাব। গতকাল ভোরে রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম সম্পর্কে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে ১৯৯২ সালে ঘটনার দিন রাতে স্থানীয় বাজার থেকে ফেরার পথে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার গুটিবাড়ী সরকারপাড়া এলাকায় খুন হন ইব্রাহিম। পূর্ব শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মফিজ উদ্দিন বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় আবুল কালামসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। একই বছর মামলাটি তদন্ত শেষে তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। পরে রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত ইব্রাহিম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজন কারাগারে থাকলেও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবুল কালাম পলাতক ছিলেন। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক জানান, সম্প্রতি আমাদের কাছে আবুল কালামের বিরুদ্ধে সাজা ওয়ারেন্টের কাগজ আসে। এরপর র‌্যাব-৪ তাকে (আবুল কালাম) শনাক্তে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। অবশেষে সোমবার ভোরে মিরপুরের পাইকপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার আবুল কালাম উচ্চ শিক্ষিত। ১৯৮৭ সালে দাখিল, ১৯৮৯ সালে আলিম এবং ১৯৯১ ফাজিল পাস করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও কখনো তিনি চাকরিতে যোগ দেননি। ২০০৭ সালে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে বদরগঞ্জে বিয়ে করেন। তবে ছয় মাসের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর বিভিন্ন সময় রংপুরে আত্মগোপনে থাকলেও ২০০১ সালে তিনি রাজধানীতে চলে আসেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ‘কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং’-এ নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এমনকি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘নাম’ও পরিবর্তন করে আজাদ মিয়া রাখেন। এতো দীর্ঘ সময় লাগার কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, এ হত্যাকাে র পর নিহতের বড় ভাই মামলা করেছিলেন। তবে কিছুদিন পর তিনি মারা যান। এ ছাড়া নিহতের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে তখন জীবিত ছিলেন। তারাই মামলা দেখভাল করতেন। কিন্তু হঠাৎই ইব্রাহিমের স্ত্রী ও ছেলে মারা যান। বাবা হত্যার সময় মেয়ে ছোট থাকায় তিনিও এ মামলার বিষয়ে তেমন কিছু জানতেন না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আবুল কালামকে ধরতে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিল। পরে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

সর্বশেষ খবর