বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্যায় নতুন এলাকা প্লাবিত, ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যায় নতুন এলাকা প্লাবিত, ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি। ফেনীর ফুলগাজীর জয়পুরে মুহুরী নদী থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। অনেক এলাকার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। ভাঙনে দিশাহারা বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে আতঙ্কিত কাঞ্চনপুর থেকে আন্দারমানিক পর্যন্ত এলাকার লোকজন। তারা কৃষিজমি ও বাড়িঘর হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা ত্রাণ বা কোনো ধরনের সহযোগিতা চান না, তাদের দাবি ভাঙন রোধ। আগে কোনো লঞ্চ বা স্পিডবোট দেখলে লোকজন ত্রাণের জন্য ছুটতেন। এখন লঞ্চ বা স্পিডবোট দেখলে সমবেত হয়ে বাঁধের দাবিতে সরব হচ্ছেন। তাদের দাবি একটাই- স্থায়ী বাঁধ।

ফেনী : টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী ও কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিন পয়েন্টে ভাঙনের অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ছয়টি গ্রাম তলিয়ে আছে। গতকাল সকালে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। রবিবার রাতে ফুলগাজী উপজেলা সদর ইউনিয়নের জয়পুর ও ঘনিয়ামোড়া অংশে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। এর আগে ২৬ আগস্ট জয়পুরে বাঁধ ভেঙে চার গ্রাম প্লাবিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, তীব্র স্রোত বন্ধ না হওয়ায় বাঁধের সংস্কার করতে পারছেন না তারা।

শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, নদী ভাঙনও অব্যাহত রয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার কয়েক হাজার মানুষ। সরকার যে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

জাজিরার পালের চর, বড়কান্দি, কুন্ডের চর ও জাজিরা ইউনিয়নে পদ্মাপাড়ের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে।

বরিশাল : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও অমাবস্যার জোর প্রভাবে উপকূলীয় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর পানিও গতকাল সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীতীরবর্তী নিচু এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

বরগুনা : বিপৎসীমার ১৮ সেমি ওপর দিয়ে বইছে জোয়ারের পানি। প্লাবিত হয়েছে বরগুনা পৌরশহরসহ উপকূলের নিম্নাঞ্চল। জোয়ারের উচ্চতা বেশি হওয়ায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে মাছের ঘের, ফসলি জমি। ভোগান্তিতে বরগুনার নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী, বাওয়ালকার, মাঝের চর, ডালভাঙ্গা; তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ফকিরহাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেঁতুলবাড়িয়া, আশার চর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী; আমতলী উপজেলার ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরিঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ার চর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত। দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে গ্রামের পর গ্রাম। কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদীঘেঁষা গ্রামগুলোয় এখন পানি থইথই করছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রায় ১১টি গ্রামের মানুষ। রান্নার চুলা থেকে টয়লেট সবকিছুই ডুবে গেছে। একই অবস্থা ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের নয়টি গ্রামের। আমন খেতসহ বাড়িঘর, পুকুর, মাছের ঘের সবই পানির তলে।

গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়ার পানি চার দিন ধরে টানা কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ১০ দিন ধরে তিস্তার পানি কমতে থাকলেও গতকাল হঠাৎ ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চলের পানি নেমে না যাওয়ায় মানুষ ঘরবাড়িতে ফিরতে পারছে না। রাস্তাঘাট এখনো কর্দমাক্ত বা স্বল্পপানিতে তলিয়ে থাকায় যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না।

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার বন্যা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, চলতি বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ৪ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়। তাদের অনেকেই উঁচু বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। এ ছাড়া তিস্তা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীপাড়ের মানুষ ভাঙনে দিশাহারা। এরই মধ্যে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, গতিয়া শ্যামসহ সদরের সারডোব, জয়কুমোর ও নাগেশ্বরীর গঙ্গাধরের বিভিন্ন এলাকার ১৫ পয়েন্টে ভাঙন চলছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমলেও এখনো বসতভিটা থেকে পুরোপুরি নামেনি। বাঁধে আশ্রিতরা কষ্টে জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত কারখানা এখনো চালু হয়নি। বেকার শত শত তাঁতশ্রমিক।

অন্যদিকে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। বন্যাকবলিতরা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কামনা করেছেন।

সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, যমুনার পানি আজকালের মধ্যেই বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর