বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লাল সাদা শাপলা পদ্মে রূপসী আশুড়ার বিল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

লাল সাদা শাপলা পদ্মে রূপসী আশুড়ার বিল

পানিতে লাল-সাদা শাপলা-পদ্ম ও দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু গহিন শালবনের মাঝে রূপসী আশুড়ার বিল আর বনের অপরূপ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ একই সুতোয় গেঁথেছে। অন্যদিকে পর্যটকদের যেমন কাছে টেনেছে, তেমনি বিলের দুই পারের মানুষের যাতায়াতে নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দিয়েছে ওই কাঠের সেতুটি। তবে অনেক স্থানে কচুরিপানায় ভরে গেছে। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধের পর আবারও পর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্যটকদের শুরু হয়েছে আনাগোনা।

পূর্বে হরিপুর বাজার ও পশ্চিমে রতনপুর বাজারে কেনাকাটা করতে সেতুর ওপর দিয়ে যোগাযোগের সুবিধা পেয়ে এলাকাবাসীও খুশি। বিলের বিশুদ্ধ পানি, মুক্ত বাতাস, চারপাশে সবুজ ঘন অরণ্য, পাখিদের কিচিরমিচির, বিলের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে বিচিত্র পাখির ওড়াউড়ির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্তরে অন্যরকম শিহরণ জাগিয়ে তোলে। আষাঢ়-শ্রাবণে লাল-সাদা শাপলা ফুল ফুটিয়ে তোলে বিলের স্বপ্নিল রূপ। এ ছাড়া অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত হয় বিলের পরিবেশ। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে সাধারণ মানুষ ও প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সরকার-ঘোষিত জাতীয় উদ্যানের শালবনের কোল ঘেঁষে এ বিলের অবস্থান। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এই বনে শাল ছাড়াও সেগুন, গামারি, কড়ই, বেত, বাঁশ, জামসহ ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছগাছড়া রয়েছে। এখনো বিলটিতে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ জেলেদের হাতে ধরা পড়ে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অশুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের কাছে অশুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অশুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে এটিকে অশুরের বা আশুড়ার বিল নামকরণ করা হয়।

অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানি এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন একসময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের চমৎকার নাম আছে, যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিশাল আয়তনের বিলটি একসময় দখলদারেরা অনেকাংশ অবৈধ ভোগদখল করে সৌন্দর্য নষ্ট করে। বিলে সারা বছর পানি ধারণের জন্য ক্রস ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়, যাতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি না কমে। এতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে, মাছ থাকবে প্রচুর। নবাবগঞ্জ এলাকায় মুনির থান ঘাট থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১২ লাখ টাকা খরচ করে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের সুবিধার্থে শাল কাঠ দিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ ৯০০ মিটার জেড আকৃতির দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয় এবং নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কাঠের সেতু। এই কাঠের সেতুর পশ্চিমে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্বে নবাবগঞ্জ। ভ্রমণপ্রেমীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাতে আশুড়ার বিলের ওপর দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতু নেছা কাঠের সেতুতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোকসজ্জার।

সর্বশেষ খবর