বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নিখোঁজের ১০ বছর পর ফিরলেন মা

ফেনী প্রতিনিধি

নিখোঁজের ১০ বছর পর ফিরলেন মা

ফেনীর সোনাগাজী বাজার এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করা মা সুফিয়া বেগম ১০ বছর পর তার দুই সন্তানের কাছে ফিরেছেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় ফেনীর সামাজিক সংগঠন ‘সহায়’ সোনাগাজী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিখন বণিক ও সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের উপস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বড় ছেলে শাওনের কাছে মা সুফিয়াকে হস্তান্তর করেন। এরপর রাতেই তাকে সংগঠনের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় এক স্বজনের বাসায় নেওয়া হয়। ঢাকায় সুফিয়ার পিতা মোহাম্মদ আলী তাকে গ্রহণ করেন। তিনি অসুস্থ সুফিয়াকে পরদিন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করান। তার আগে সুফিয়ার চিকিৎসা খরচ বাবদ তার ছেলের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দেন মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুফিয়া বেগম (৪০) ১০ বছর আগে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর অত্যাচারের একপর্যায়ে মস্তিষ্ক বিকৃতির শিকার হন। পরে পাগল অপবাদে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী মোহাম্মদ আলম। তারপর সুফিয়ার দুই ছেলে সন্তান ও স্বজনরা নানা স্থানে খুঁজেও তার আর সন্ধান পাননি। এ অবস্থায় ২০১১ সালে সুফিয়াকে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় দেখতে পান গ্রামের এক প্রতিবেশী। সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, দেড় মাস ধরে সুফিয়া সোনাগাজী পৌর এলাকার অলিগলিতে ঘোরাফেরা করছিলেন। তার নাম-পরিচয় কারও জানা ছিল না। পরে তিনি সামাজিক সংগঠন ‘সহায়’কে অবগত করলে এর প্রধান সমন্বয়ক (মঞ্জিলা মিমি) সুফিয়াকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর তার পরিবারের খোঁজ নেওয়া শুরু করে সহায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে শাওন নামে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে জানান, কুমিল্লা জেলার হোমনা থানা পুলিশের ফেসবুক পেজে পরিবারের খোঁজ পেতে যে মহিলার ছবি ও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তিনি তার মা। তার মায়ের নাম সুফিয়া বেগম, বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার পুরান চর এলাকায়। তিনি ১০ বছর ধরে নিখোঁজ। সুফিয়ার পরিচয় শনাক্তের পর বড় ছেলে শাওন ও তার ফুফাতো ভাই সিফাত ফেনীতে আসেন এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে আবেগাপ্লাতু হয়ে পড়েন। সুফিয়ার ১৬ বছর বয়সী বড় ছেলে মোহাম্মদ শাওন জানায়, ১৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরমান নামে তার আরেকটি ছোট ভাই আছে। সে অভাবের তাড়নায় গ্রামে রিকশা চালায়। শাওন ঢাকার আলরাজী হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের কাজ করে। শাওন সবসময়ই ঢাকা শহরে তার মাকে খুঁজে বেড়াত। বাবা মোহাম্মদ আলম ১০ বছর আগে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর থেকে তারা দুই ভাই নানার বাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় বেড়ে উঠেছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল হোসেন জানান, সুফিয়া  চিকিৎসা ও পরিবারে সদস্যদের সঙ্গ পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর