শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্কুল-কলেজ খুলছে কাল

বন্যার কারণে ক্লাস অনিশ্চিত অনেক প্রতিষ্ঠানে

আকতারুজ্জামান

স্কুল-কলেজ খুলছে কাল

কাল খুলছে স্কুল-কলেজ। কুড়িগ্রামের একটি স্কুলে চলছে ধোয়ামোছার কাজ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দীর্ঘ দেড় বছর পর সারা দেশের স্কুল-কলেজ আগামীকাল খুলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ১১ দফা নির্দেশনা। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে, এ জন্য তাদের মধ্যে বইছে খুশির আমেজ। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক স্কুল। হাজার হাজার স্কুল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এখনো বন্যার ক্ষত অনেক স্কুলে। সব মিলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা জানান, কুড়িগ্রামে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যলয় ভাঙনের কবলে। ভাঙনে বিলীন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চেরাগির আলকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহুলাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রৌমারী উপজেলার ফলুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব বিদ্যালয় থেকে এখন পানি নেমে গেলেও ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছেন, তিনটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত হলেও পানি নেমে গেছে। অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িও প্লাবিত হওয়ায় তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যা, নদী ভাঙন আর দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় নোংরা ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। চেয়ার-টেবিল ময়লা-আবর্জনা আর মাকড়সার জালে সৌন্দর্য হারিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে ধোয়ামোছাসহ পরিচ্ছন্নতার কাজ। মাদারীপুরে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় অর্ধশত বিদ্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী মাদারীপুর জেলায় ৭২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে নিম্নাঞ্চলের ৪০টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে, মাঠে ও যাতায়াতের রাস্তায় পানি উঠেছে। মাদারীপুর সদর উপজেলায় ২০৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫, শিবচর উপজেলায় ১৮০টির মধ্যে ২৬, রাজৈর উপজেলায় ১৩৯টির মধ্যে ৬ এবং কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৯৯টির মধ্যে ৩টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত। বন্যার কারণে পাঠদানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ জানান, জেলার যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠতে পারে তার একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢোকায় ক্লাস শুরু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের রাস্তাঘাট, মাঠ, ওয়াশরুম তলিয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় রয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মুদিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে এখন হাঁটুপানি। স্কুলের আঙিনায় কোমরপানি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম জানান, যেসব বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে তাদের শিক্ষার্থীরা কীভাবে ক্লাস করবে তা নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বন্যায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার অনেকটি থেকে পানি নেমে গেছে। তার পরও কিছু স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। যেসব স্কুল এখনো পানির নিচে সেগুলোয় স্কুল খোলার দিন রবিবার ক্লাস হওয়ার সুযোগ নেই।’ জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ও ক্লাসরুমে পানি ঢুকে পাঠদান ব্যাহতের পাশাপাশি ভাঙনের কবলেও পড়েছে টাঙ্গাইলের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যায় এ জেলার ৪৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। সেগুলোয় কীভাবে পাঠদান করা হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষকরা। জামালপুরের ছয় উপজেলায় তলিয়ে যাওয়া ১৯০টি বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। যমুনাবেষ্টিত চরাঞ্চলে এখনো অনেক বিদ্যালয়ে পানি রয়েছে। যমুনার পানিতে ইসলামপুর উপজেলার ডেবরাইপ্যাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের যমুনা চরে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে। সূত্র জানান, জেলার ২০টি মাধ্যমিক ও ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিতর এখনো পানি জমে আছে। নীলফামারীতে বন্যায় ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ৭, খালিশাচাপানী ইউনিয়নে ২, ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়নে ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর