বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পানশিরে তালেবানের ধ্বংসযজ্ঞ

রোমহর্ষক বর্ণনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে

প্রতিদিন ডেস্ক

পানশিরে তালেবানের ধ্বংসযজ্ঞ

আফগানিস্তানের পানশির দখলের পর এক তালেবান যোদ্ধার অবস্থান -গার্ডিয়ান

আফগানিস্তানের পানশির উপত্যকা সবশেষে তালেবানবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সম্প্রতি সেটিও তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এরপর পানশিরের সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করছে তারা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানশির থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পানশিরের সঙ্গে অন্য এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। তালেবান যে সহনশীলতা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা তারা রাখছে না। পানশিরের সড়কে সম্প্র্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা বলা উল্লেখ করা হয়। এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে সামরিক পোশাকে অস্ত্রসহ এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন তালেবান সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তবে এটা নিশ্চিত নয়, ওই ব্যক্তি সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন কি না। কারণ, ওই এলাকার অনেকেই এমন সামরিক পোশাক পরেন। যদিও ওই ভিডিওতে একজন বলেন, নিহত ব্যক্তি আসলে সাধারণ মানুষ। পানশিরে তালেবানের হাতে যারা নিহত হয়েছে, তার মধ্যে ২০টি ঘটনার তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। গণমাধ্যমটি বলছে, এই ২০ জনের মধ্যে একজন দোকানি রয়েছেন। তার নাম আবদুল সামি। তার দুই ছেলেমেয়ে। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, তালেবান যখন পানশির দখলে নিতে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন সামি এলাকা ছেড়ে যাননি। সামির বক্তব্য ছিল, ‘আমি একজন দরিদ্র মানুষ। এই যুদ্ধের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ সামি যেমনটা ভেবেছিলেন, তেমনটা ঘটেনি। পানশির তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে তালেবান। তাদের অভিযোগ, বিদ্রোহীদের কাছে মোবাইল ফোনের সিম বিক্রি করেন তিনি। গ্রেফতারের কয়েক দিন পর বাড়ির কাছের একটি এলাকায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মরদেহ দেখে মনে হয়েছে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তালেবান পানশিরে প্রবেশের পর নতুন একটি কৌশল হাতে নিয়েছে। তারা সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। তালেবানের এক মুখপাত্র আবদুল্লাহ রাহমানি বলেন, পানশিরবাসীর উচিত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ও  দৈনন্দিন কাজকর্ম করা। তিনি বলেন, ‘একজন দোকানি যদি  দোকানে যান, একজন কৃষক যদি মাঠে যান, তবে আমরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্ষায় কাজ করব।’ তালেবানের এমন বক্তব্যের ওপর ভরসা পাচ্ছে না পানশিরবাসী। কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, পানশিরের অন্যতম ব্যস্ত একটি বাজার ফাঁকা পড়ে আছে। মানুষ এখনো পানশির থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় সেখানে খাবার ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। তালেবান বরাবরই দাবি করছে, জনসাধারণ তাদের লক্ষ্যবস্তু নয়। কিন্তু তাদের কথা আর কাজে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, হাজারা ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক নিধন অভিযান চালিয়েছে তালেবান। এ ছাড়া সেখানে এক পুলিশকেও হত্যা করেছে তারা। যদিও তালেবানের প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে না। সেনা কলোনি ত্যাগের নির্দেশ তালেবানের হাজারো মানুষের বিক্ষোভ : তালেবানের বিরুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার শহরে হাজারো আফগান বিক্ষোভ করেছেন। সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন এবং স্থানীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে, তালেবান সদস্যরা গতকাল একটি আবাসিক সেনা কলোনি খালি করার নির্দেশ দেওয়ার পর ওই বিক্ষোভ করেন সেখানকার বাসিন্দারা। খবর রয়টার্স।

প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে কলোনি খালি করতে বলার পর বিক্ষোভকারীরা কান্দাহারে গভর্নরের বাড়ির সামনে জড়ো হন। স্থানীয় গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কান্দাহার শহরের একটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

তালেবান সদস্যরা যে এলাকাটি খালি করতে বলেছেন সেটি মূলত অবসরে যাওয়া আর্মি জেনারেল ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর অন্য সদস্যদের বসবাসের এলাকা। সেখানে কেউ কেউ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। তাঁদের বাড়ি খালি করার জন্য তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তালেবানের মুখপাত্রের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর