বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্য

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ টিফা চুক্তি স্বাক্ষর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো ব্যবস্থাপনা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট বা সংক্ষেপে টিফা) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে অস্ট্রেলিয়া। গতকাল ভার্চুয়াল মাধ্যমে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দেশটির বাণিজ্য, পর্যটন ও বিনিয়োগ মন্ত্রী মি. ডেন তেহান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তিকে দেশের জন্য আরেকটি সাফল্য বলে মনে করছে সরকার।  গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভার্চুয়ালি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি যে বাংলাদেশ এমন একটি সময় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টিফা স্বাক্ষর করল যখন বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। গত পাঁচ দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাঠামো হলো এই ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট বা টিফা। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ উন্মোচনের একটি প্ল্যাটফরম রূপে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, টিফার অধীনে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে যাতে উভয় দেশের সেক্টর ও সাব-সেক্টরের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করার জন্য আলোচনা এগিয়ে নিতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। টিপু মুনশি বলেন, আমরা আশা করব এই ফ্রেমওয়ার্ক  বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত ও  কোটামুক্ত সুবিধা ধরে রাখা, বাণিজ্য উদারীকরণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ সব প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কাজ করবে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী  তেহানকে অতিসত্বর বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

ক্যানবেরার বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, এই আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী মি. তেহান বলেন, তিনি উপযুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিনিধি দল নিয়ে আগামী বছর সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে যাবেন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ প্রসার এবং তা অধিকতর গতিশীল করতে কাজ করে যাচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই ধরনের অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের উভয় দেশে কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টিতে আরও অবদান রাখতে পারব। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং জ্বালানি চাহিদা পূরণে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বহাল রাখার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। অস্ট্রেলিয়া কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিশ্বমানের দক্ষতা প্রদান করে থাকে যা থেকে বাংলাদেশ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো (টিফা) চুক্তি করল বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির শিরোনামে কো-অপারেশন এবং অ্যাগ্রিমেন্ট শব্দ দুটি থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত চুক্তিতে ‘কো-অপারেশন’ শব্দটি নেই। উপরন্তু ‘অ্যাগ্রিমেন্ট’র পরিবর্তে ‘অ্যারাঞ্জমেন্ট’ শব্দটি রয়েছে। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত হওয়া চুক্তিটির কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো শর্তও নেই। প্রস্তাবিত চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর। এরপর উভয়পক্ষ চাইলে এটি নবায়ন করতে পারবে।  

ক্যানবেরার বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত দশকে প্রায় ছয় গুণ বেড়ে গত বছরে ২.৬ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে। আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও টিফা উভয় দেশ থেকে নতুন পণ্যের বাণিজ্যিক  ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করতে সহায়তা করবে। টিফা কাঠামোর মাধ্যমে তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষাসেবা ছাড়াও উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সব ধরনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। টিফার আওতায় অস্ট্রেলিয়া যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের উদ্বোধনী সভা ২০২২ সালের শুরুতে আয়োজনের প্রস্তাব করেছে। অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান এবং বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার  জেরিমিব্রুয়ার বক্তব্য রাখেন। এ সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ও এর আশপাশের দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত অঞ্চলে ৩০০ মিলিয়ন জনগণের বাজারে প্রবেশের জন্য অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে অস্ট্রেলিয়া যেমন বিনিয়োগ করতে পারে তেমনি অস্ট্রেলিয়ার শিল্পজাত পণ্যের সরবরাহকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করতে পারে। ভার্চুয়াল এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুই দেশের হাইকমিশনের কর্মকর্তাগণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর