শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতি

দুর্বলতা চিহ্নিত করতে ও প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার নির্দেশ

মানিক মুনতাসির

বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতি

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র দেড় শতাংশ। অবশ্য গেল বছরের শেষের বাস্তবায়ন চিত্রও তেমন একটা সুখকর ছিল না। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজই সঠিক সময়ে শেষ করতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এমনকি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর কাজেও চলছে ধীরগতি। এ জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বাজেট বাস্তবায়নে গতি আনতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। যদিও এটা আরও আগেই করার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগের একাধিক সূত্র। জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থবছরের প্রত্যেক প্রান্তিক বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র ও পরিকল্পনায় কী ছিল এসব তথ্য নির্দিষ্ট ফরমে সংযোজন করে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের বাজেট বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ থেকে বাজেট বাস্তবায়নে তদারকি জোরদার করতে বলা হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের বাধা কিংবা দুর্বলতাও চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এসব দুর্বলতা কাটানোর সম্ভাব্য সমাধানগুলোও প্রণয়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বছর শেষে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের নিমিত্তে এ নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। কেননা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়িয়ে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। অর্থ বিভাগ বলছে, শুধু এডিপি বাস্তবায়নই নয়, রাজস্ব আদায়েও চলছে ধীরগতি। এতে অনেক সময় সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতারও সৃষ্টি হয়। এ জন্য বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এতে একদিকে সরকারের ব্যয় পরিকল্পনা যেমন ঠিক থাকে, আবার সরকারি ব্যয়ের অপচয়ও রোধ করা যায় বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।

এদিকে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে গতি আনতে বিশেষ নজর রাখছে সরকার। কেননা করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থমকে রয়েছে। কাক্সিক্ষত হারে আসছে না বিদেশি বিনিয়োগও। ফলে এ মুহূর্তে উচ্চতর জিডিপি অর্জনে ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে সরকার।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছর ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এ বছরের রাজস্ব আহরণ চিত্র আরও বেশি হতাশাব্যঞ্জক। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মাত্র ১৩ হাজার ৮৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম মাসেই সাত হাজার ২২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ৭৫৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৬.২৪ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে এডিপি মাত্র দেড় শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও কম।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সরকারি দফতরে অনিয়ম, দুর্নীতি, সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা। এ ছাড়া রয়েছে প্রশাসনিক অদক্ষতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন। এ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর