রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ডেল্টায় নারীর মৃত্যু বেশি কেন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে পুরুষের হার বেশি ছিল। কিন্তু করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে বাড়ছে নারীর মৃত্যু। অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু এবং গর্ভপাতও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত ছড়ানোর সক্ষমতা, নারীদের টিকা দেওয়ার ও টেস্ট করানোর অনুপাত কম হওয়াকে এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আমরা দেখেছি বেশি আক্রান্ত হয়েছে পুরুষ এবং মৃত্যুহারও বেশি তাদের। নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম ছিল। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। নারীদের আক্রান্ত হার ও মৃত্যুহার আশঙ্কাজনক বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে আমার কাছে কয়েকটি বিষয়কে দায়ী মনে হয়। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক। পুরুষরা বাইরে বেশি যাওয়ায় আক্রান্ত বেশি হয়। এখন বাড়ির পুরুষ আক্রান্ত হলে বাড়ির নারী, শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। নারীদের মধ্যে টিকা দেওয়ার হার কম থাকায় সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যাচ্ছে। ফলে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বয়স্ক নারীদের মধ্যে ভিটামিন ডির পরিমাণ কম থাকাও অন্যতম কারণ। নারীরা আক্রান্ত হলে টেস্ট করতে চায় না। অনীহার কারণে দেরিতে শনাক্ত হওয়ায় রোগ প্রকট আকার ধারণ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু ও গর্ভপাতের হার বেড়েছে। অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে গর্ভের সন্তান মারা যাচ্ছে এবং মাও অনেক ক্ষেত্রে প্রাণ হারাচ্ছে। তবে গর্ভপাতের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। আপাতদৃষ্টিতে আমার মনে হচ্ছে প্লেসেন্টারিতে গিয়ে ভাইরাস অণুঘটকের কাজ করে জরায়ু থেকে ভ্রæণকে আলাদা করে দিচ্ছে। ফলে গর্ভপাতের কারণ ঘটছে। গর্ভবতী নারীদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। নারী মৃত্যু বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে আরও তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গতকাল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে নারী ১৯ জন, পুরুষ ১৬ জন। এ ঘটনা প্রথম দেখা গেছে গত ১২ আগস্ট। ওই দিন ১০৮ জন নারী মারা গিয়েছিলেন, পুরুষ মারা গিয়েছিলেন ১০৭ জন। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৯ আগস্ট। সেদিন ৮৩ জন নারী আর ৭৬ জন পুরুষের মৃত্যু হয়। গত ২৩ আগস্ট ৬৪ জন নারীর মৃত্যুর বিপরীতে ৫৩ জন পুরুষ মারা যায়। এর এক দিন বাদেও দেখা গেছে একই চিত্র। ২৪ আগস্ট দেশে যে ১১৪ জন কভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার ৫৮ জন নারী, পুরুষ ৫৬ জন। ২৭ আগস্ট মারা গেছেন ১১৭ জন। এর মধ্যে নারী ৬১ জন, পুুরুষ ৫৬ জন। ২৯ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮৯ জন মারা গেছে। এর মধ্যে নারী ৪৮ জন, পুরুষ ৪১ জন। ৩০ আগস্ট মারা গেছেন ৯৪ জন। নারী ৪৯ জন, পুুরুষ ৪৫ জন। তিন দিনের বিরতিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৭০ জনের মধ্যে নারী ছিলেন ৩৬ জন, পুুরুষ ৩৪ জন। ৪ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৬১ জন। নারী ৩১ জন, পুুরুষ ৩০ জন। ৬ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৬৫ জন। নারী ৩৩ জন, পুুরুষ ৩২ জন। ৭ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে নারী ৩৭ জন, পুুরুষ ১৯ জন। ৮ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৫২ জন। এর মধ্যে নারী ৩২ জন, পুুরুষ ২০ জন। ১১ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৪৮ জন। নারী ২৬ জন, পুুরুষ ২২ জন। ১২ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৫১ জন। এর মধ্যে নারী ছিলেন ২৯ জন, পুুরুষ ২২ জন। চার দিনের বিরতিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেখা যায় করোনায় মারা যাওয়া ৫১ জনের মধ্যে ২৬ জন নারী এবং ২৫ জন পুরুষ। ১৭ সেপ্টেম্বর করোনায় প্রাণ হারোনো ৩৮ জনের মধ্যে ২৫ জন ছিলেন নারী, ১৩ জন পুরুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত মাস থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে পুরুষের তুলনায় নারীর মৃত্যু বেশি দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দায়ী নাকি অন্য কোনো কারণ আছে সে বিষয়ে গবেষণা করা দরকার। এ ক্ষেত্রে ভারতে সংক্রমণের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে নারীদের টিকাদান ও উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করানোর তাগিদ দিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর