রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রচার-প্রচারণা শেষ, কাল ইউপি-পৌরতে ভোট উৎসব

গোলাম রাব্বানী

আজ রাত পোহালে কাল প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬১ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে তৃণমূলের এ নির্বাচনের। এ ছাড়া এই দিন ষষ্ঠ ধাপের স্থগিত ৯ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে। গতকাল মধ্য রাতে এসব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এর আগে করোনা মহামারীর কারণে এসব নির্বাচন স্থগিত করেছিল ইসি। তৃণমূলের এই নির্বাচনে উৎসবের পাশাপাশি কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে। ভোট নিয়ে নানামুখী অভিযোগ রয়েছে প্রার্থীদের। এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। এ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা-অজানা শঙ্কা রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। ভোট নিয়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনী সব এলাকায়। ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। যদিও ইসি ভোটারদের অভয় দিয়ে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্‌বান জানিয়েছে। ইসি বলছে, নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে নির্বাচনী এলাকায়। যেসব এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে ভোট নিয়ে উত্তেজনা বেশি। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। জানা গেছে, ১৬১ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৫ জন, চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৫৪৫ জন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৬৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৬ হাজার ৩৩৩ জন। এদিকে নয় পৌরসভার মধ্যে তিনটি পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। আর বাকি পৌরসভায় মেয়র পদের লড়ায়ে রয়েছেন ২৭ জন।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে গতকাল দিনগত রাত ১২টায়। এ সময়ের পর কোনো প্রার্থী বা সমর্থকের কেউ কোনো ধরনের প্রচার চালাতে পারবেন না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করতে হয়। এ ছাড়া নির্বাচনী আইন অনুয়ায়ী- কাল ‘ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২ এবং ভোট গ্রহণের দিন রাত ১২ থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি জনসভা আহ্‌বান, অনুষ্ঠান বা যোগদান করতে এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না।’ ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ১১ এপ্রিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় ১ এপ্রিল তা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছিল। তখন ১৬৭ ইউপির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। তবে প্রার্থী মারা যাওয়ায় পাঁচটি ইউপি এবং সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে আপাতত ভোট হচ্ছে না। সেই হিসাবে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬১ ইউপি এবং ৯টি পৌরসভায় ভোট হবে আগামীকাল ২০ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া নয়টি পৌরসভার সব কটিতে এবং ১৬১ ইউপির মধ্যে ১১টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গতকাল র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ভোট গ্রহণের জন্য আজ বিশেষ নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল দিবাগত রাত ১২টায়। তাই এ দিন ভোর থেকেই গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে এবারেও চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোট সামনে রেখে সব ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিসি-এসপি-রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর