বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব

নওগাঁর মহাদেবপুরের নাটশাল মাঠে গতকাল বিকালে জাতীয় আদিবাসী ও আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলার ৩টি স্থানে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান নেতারা। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ওই মাঠে কারাম উৎসব পালন করে আসছেন তারা।

মহাদেবপুর আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলক উড়াও জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশি তিথিতে কারাম উৎসব পালিত হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে আদিবাসী মেয়েরা শালের দাঁতন কাঠি ভেঙে পুকুরে স্নান করে যেসব জমিতে ভালো ফসল হয় সেসব জমি থেকে একটু একটু করে মাটি নিয়ে বাঁশ দিয়ে বোনা ছোট ডালায় ভর্তি করে। তারা জাওয়া গান গাইতে গাইতে ডালার চারদিকে তিন পাক ঘোরে। এরপর তাতে তেল ও হলুদ দিয়ে মোটর, মুগ, বুট ও বিভিন্ন ফসলের বিজ মাখায়। কুমারী মেয়েরা স্নান করে ভিজে কাপড়ে ছোট শাল পাতার থালায় বীজগুলো  রেখে সিঁদুর ও কাজলের তিনটি দাগ টেনে দেয়। এর নাম বাগাল জাওয়া। আর ওই মেয়েদের বলা হয় জাওয়ার মা। এরপর টুপা ও ডালাতে বীজ বোনা হয়। বাগাল জাওয়া লুকিয়ে খেতের পাশে রেখে টুপা ও ডালার জাওয়া নিয়ে কুমারীরা ফিরে আসে। পাঁচটি ঝিঙা পাতা উল্টো করে বিছিয়ে প্রতি পাতায় একটি করে দাঁতন কাঠি রেখে বেদি তৈরি করা হয়। তিনি জানান, আদিবাসী পুরুষরা নানা আচার পালন করে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে কারাম গাছের ডাল কেটে এনে বেদিতে পুঁতে দেন। কিশোরী মেয়েরা সূর্যোদয় থেকে উপোস থেকে রাতে ফুল, ফলে ভরা নৈবেদ্য সাজিয়ে বেদির চারপাশে বসে পূজা শুরু করে। পূজা শেষে রাতভর চলে ঐতিহ্যবাহী নাচ গান। গানে গানে তারা উৎসবের বিষয় ও সমসাময়িক নানা বিষয় তুলে ধরেন। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে সুখ, সমৃদ্ধি, ভালোবাসা আর ভালো ফসল কামনা করেন। বয়োবৃদ্ধ আদিবাসী নগেন কুজুর জানান, বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত এ কারাম পূজা পালন করা হয়ে থাকে। কথিত আছে আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারাম গাছকে পূজা করতেন। কিন্তু কর্মা করতেন না। কর্মা এক দিন পূজার কারাম গাছ তুলে নদীতে ফেলে দেন। এরপর তিনি নানা বিপদ-আপদ আর অভাব অনটনে পড়েন। কর্মা আবার সেই গাছ খুঁজে এনে পূজা শুরু করলে অভাব দূর হয়। তিনি জানান, পূজা শেষে উপোস থাকা কিশোরীরা পিঠা, চিতুই পিঠা, কুশলি পিঠা প্রভৃতি নানা খাবার নিয়ে পরস্পরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভাঙেন। শেষে নিজেদের মধ্যে সংগ্রহ করা চাল, ডালে তৈরি খিচুড়ি দিয়ে উপস্থিত স্বজন ও অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর