বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

২২০০ শিক্ষক সংকট নিয়ে চলছে মাধ্যমিক স্কুল

তিন বছর ধরে চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়া

আকতারুজ্জামান

প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষক সংকট নিয়ে ধুঁকছে দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলো। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় এসব স্কুলে নামমাত্র পাঠদান সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত প্রায় ১০ বছরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলায় শিক্ষক সংকট আরও প্রকট হয়েছে। শিক্ষক সংকট, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকা, এক বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে অন্য বিষয়ে ক্লাস নেওয়া, লাইব্রেরিয়ান সংকটসহ নানা সমস্যায় পর্যুদস্ত দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলো। সরকারি মাধ্যমিকের ২ হাজার ১৫৫ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর নানা প্রক্রিয়ায় পার হয়ে গেছে ৩ বছর। কিন্তু নিয়োগে উত্তীর্ণদের এখনো কর্মস্থলে পদায়ন করা হয়নি। তাই কাটেনি সংকটাবস্থাও। পিরোজপুরে এস বি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৭ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখন কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬ জন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য প্রায় পাঁচ বছর ধরে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটে ভুগছে এই বিদ্যালয়। এ ছাড়া চারজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। সুনামগঞ্জে সদরে অবস্থিত সরকারি এস সি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষকের সৃষ্ট পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৯ জন শিক্ষক। ২৩ জন শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়ে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে জেলা সদরে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শিক্ষকের স্বল্পতা। শিক্ষকের পাশাপাশি শূন্য রয়েছে কয়েকটি কর্মচারীর পদও। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পদগুলো ফাঁকা রয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখা সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (শিক্ষক আত্তীকৃত হয়নি এমন বিদ্যালয় বাদ দিয়ে) সংখ্যা ৩৫১টি। এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের মোট সৃষ্ট পদ রয়েছে ১০ হাজার ৯০৪টি। এর প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়েছে, কিন্তু শিক্ষকদের আত্তীকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এমন বিদ্যালয় রয়েছে ৩৩২টি। শিক্ষক আত্তীকরণ শেষ হলে এসব বিদ্যালয়ের কর্মরত ও শূন্য পদের তালিকা পাবে মাউশি। শরীয়তপুরে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫২টি শিক্ষকের সৃষ্ট পদ থাকলেও এখানে শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৯ জন। ২৩ জন শিক্ষকের স্বল্পতা নিয়ে ধুঁকছে এ বিদ্যালয়টি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এমারত হোসেন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট। জানা গেছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট কাটাতে গত ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ১৫৫ প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে ফল প্রকাশ করে কমিশন। এরপর সম্পন্ন হয় ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ইতিমধ্যে এসব প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের পদায়ন না হওয়ায় চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন শুধু তাদের পদায়ন বাকি রয়েছে। এই পদায়ন হলে শিক্ষক সংকট কেটে যাবে। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিগগিরই তাদের পদায়ন দেবে, অথবা পদায়ন দিতে অধিদফতরকে নির্দেশনা দেবে। তবে এ নির্দেশনা পেতে কত সময় লাগবে তা জানাতে পারেননি বেলাল হোসাইন।  সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা দেওয়ার পর নিয়োগবিধি সংশোধনজনিত কারণে গত ২০১২ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল। এর ফলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করে। মাঝে-মধ্যে নন ক্যাডার থেকে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিলেও সংকট থেকেই গেছে।

সর্বশেষ খবর