কাশফুলের শুভ্রতার দিগন্তবিস্তৃত অবারিত সৌন্দর্যে প্রকৃতিকে ঢেকে দেয় শরৎ। শেফালি, মালতি, কামিনী, জুঁই, টগর আর সাদা কাশফুল মাথা উঁচিয়ে রূপসী বাংলায় শরতের অপরূপ সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে। শিশিরভেজা ঘাসের বুকে শিউলির অনিন্দ্য সুষমা ছড়িয়ে পড়েছে শরতের প্রকৃতিতে। আবহমান বাংলার চিরায়ত শরতের সুষমা তুলে ধরতেই রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে শরৎ উদযাপন করেছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সকাল ও বিকাল দুই পর্বে বিভক্ত ছিল দিনব্যাপী এই শরৎবরণ উৎসব। গতকাল ছুটির দিনের সকাল সাড়ে ৭টায় স্বপন সরকারের ঢোল বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
এরপর নাচে, গানে জমে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চ। নৃত্যের ছন্দে, কবিতার উচ্চারণে আর সুরের মূর্ছনায় মুক্তমঞ্চ থেকে শিল্পের আলো ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র একাডেমিতে।
শিল্পীদের নাচ, গান, আবৃত্তির পাশাপাশি তাদের বাহারি পোশাক মন কেড়ে নিয়েছে শরৎপ্রিয় বাঙালির। জামদানি ও কাতানের সঙ্গে পুঁতির মালা আর কাজলটানা চোখের ওপরে কালো টিপের সঙ্গে ঝুমকা দুলে তরুণীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরা নিজেদের রাঙিয়েছেন প্রিন্টের পাঞ্জাবিতে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। স্বাগত বক্তৃতা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। নজরুলের গান ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক’ পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। বহ্নিশিখা পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথের গান ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’। সুরতীর্থ পরিবেশন করে ‘শিশিরে শিশিরে শরতে ভোরের আগমনি। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, নৃত্যজন, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায় ও বুলবুল ললিতকলা একাডেমি অব ফাইন আর্টস। একক কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, অনিমা রায়, মামুন জাইদ খান, সজিব। একক আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ ও নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি। বিকালে দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই ছিল শিশুদের পরিবেশনা। অংশ নেয় মৈত্রী শিশুদল, গেন্ডারিয়া কিশলয়, কচি-কাঁচার মেলা ও শিল্পবৃত্ত। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, পঞ্চভাস্কর, সমস্বর, সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি ও বুলবুল ললিতকলা একাডেমি অব ফাইন আর্টস। একক সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ, সরদার রহমতউল্লাহ, বিশ্বজিৎ রায়, ফেরদৌসী কাকলি, সঞ্জয় কবিরাজ, রত্না সরকার, মহুয়া মঞ্জুরী সুনন্দা, শ্রাবণী গুহ রায়, সমর বড়ুয়া, পল্লব গোমেজ, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, রোমানা আক্তার, শান্তা সরকার, অমিত হিমেল, শিমুল সাহা, মারুফ হোসেন ও তাহমিনা আক্তার মুক্তি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে ঢাকা স্বরকল্পন ও মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাসুদুজ্জামান, ফয়জুল আলম পাপ্পু ও সুপ্রভা সেবতি।‘জনকের মৃত্যু নেই’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় নাটক ‘জনকের মৃত্যু নেই’।
পুরস্কার : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে আগস্ট মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত শিশু-কিশোরদের অনলাইন আবৃত্তি প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করেছে আয়োজক সংগঠন খেলাঘর ঢাকা মহানগর উত্তর।
গতকাল শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে তিনটি বিভাগে পাঁচজন করে ১৫ শিশুর হাতে খেলাঘরের পক্ষ থেকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।