রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ডিজিটাল প্রদর্শনী

শিল্পকলায় বঙ্গবন্ধু-বাপু

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শিল্পকলায় বঙ্গবন্ধু-বাপু

দুই বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী। নিজেদের কীর্তিতে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অমর হয়ে আছেন এ দুই মহান নেতা। দুই ভূখন্ডের এ দুই মহান নেতার কার্যক্রম এবং নেতৃত্বেও ছিল সাদৃশ্য। স্বাধীন ভূখন্ডের স্বপ্ন দেখা দুই মহামানবের জন্মক্ষণের পার্থক্য অর্ধশতাব্দীর। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ আর মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবর্ষ। মহান এ দুই নেতার জন্মবার্ষিকীর চমৎকার ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ১৭ দিনের বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিল্পকর্মে এক ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে দুই মহামানবের সংগ্রামী জীবনকর্ম। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি।

গতকাল সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয় এ প্রদর্শনী। ২২টি তথ্যদেয়াল ও শতাধিক ডিজিটাল মুহুর্তের মিশেলে তৈরি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। গ্যালারির প্রবেশমুখেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর আলোকচিত্র। এর ওপর লেখা ‘জয় বাংলা’ ও ‘অহিংসা’। বঙ্গবন্ধু ও বাপুর এ দুটি শব্দে উঠে এসেছে দুই দেশের স্বাধীনতা। প্রতিটি শিল্পকর্মের শুরুতেই বিষয়বস্তু তুলে ধরার পাশাপাশি প্রশংসাপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের চোখে দুই মহান নেতা সম্পর্কে ধারণাও তুলে ধরা হয়েছে। অন্য একটি শিল্পকর্মে ১৯৪৭ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর সাক্ষাতের দিনটির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘মিটিংওয়ালে’ প্রদর্শিত ছবিটিতে একই ফ্রেমে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী। সম্ভবত এটিই বিশ্বের একমাত্র ছবি যেখানে বঙ্গবন্ধু এবং বাপু উভয়েই এক ফ্রেমে রয়েছেন। একটি হলোগ্রাফিক টাইম মেশিনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ছবিগুলিকে একটি সময়রেখার সঙ্গে সাজানো হয়েছে। যার ফলে দর্শনার্থীরা সময় এবং জীবনকাল সম্পর্কে বুঝতে পারেন। পরবর্তী অংশটি তাঁদের তারুণ্যের ঘটনাগুলি বর্ণনা করে যে সময়ে তাঁদের নৈতিক চরিত্র গঠন হয়েছিল। অন্য একটি ওয়ালে এ দুই মহান নেতার জীবনের তিনটি বিখ্যাত আন্দোলন তুলে ধরা হয়েছে। আরেকটি প্রাচীরে রয়েছে ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে মানুষের কষ্ট, দুর্দশা এবং অত্যাচার-অবিচারের দৃশ্য জালিয়ানওয়ালাবাগ এবং বাংলাদেশের ২৫ মার্চের গণহত্যা। ১৯৭১ সালের প্রাচীরে মুক্তিযুদ্ধের বছরের ঘটনাগুলি পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হয়েছে। বাপুর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী ও এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাকে উৎসর্গ করেও রয়েছে একটি দেয়াল। এ প্রাচীরটিতে উঠে এসেছে তাঁদের সঙ্গীদের সফলতার পেছনে এ দুই নারীর অনুপ্রেরণার নানা বিষয়। দেশ ও জনগণের জন্য দুই নেতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা-ও উঠে এসেছে প্রদর্শনীতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীর গ্যালারিটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ১১ অক্টোবর শেষ হবে প্রদর্শনী। গ্যালারিতে প্রদর্শনী শুরুর আগে চিত্রশালা মিলনায়তনের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধন পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ‘আলো আমার আলো’ ও ‘চল বাংলাদেশ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু নৃত্যদল। তারা আরও পরিবেশন করে নৃত্যালেখ্য ‘গঙ্গা ঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’। ‘বিপুল তরঙ্গরে’ এবং বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় ‘আমরা করব জয়’ গানটি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীরা। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেছিলেন। ডিজিটাল মাধ্যমের সে প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনীটি।

সর্বশেষ খবর