শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
যানজটে বেহাল নগরী

মামলাতেই আগ্রহ ট্রাফিক পুলিশের

আট মাসে ১৫২ কোটি টাকা জরিমানা ম রাস্তায় অতিমাত্রায় গাড়ি বেড়েছে : মুনিবুর ম মামলায় অনেক গাড়ির মালিক নিঃস্ব : এনায়েত

আলাউদ্দিন আরিফ

মামলাতেই আগ্রহ ট্রাফিক পুলিশের

যানজট নিয়ন্ত্রণের চেয়ে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করতে আগ্রহ বেশি ট্রাফিক পুলিশের অধিকাংশ সদস্যের। গত আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশ ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬২টি মামলায় জরিমানা করেছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৭ টাকা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ কারণে-অকারণে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, করোনা সংক্রমণজনিত লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্রে ত্রুটিজনিত গাড়ির সংখ্যা। অনেক অনভিজ্ঞ ও লাইসেন্সের মেয়াদবিহীন চালক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছেন। এসব কারণে প্রসিকিউশন বা মামলার সংখ্যাও বেড়েছে।

সোমবার রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় নিজ মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন শওকত আলী নামে একজন মোটরসাইকেল রাইডার। তার অভিযোগ, ট্রাফিক সার্জেন্ট ছোটখাটো ত্রুটির কারণে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা হলে তারাও ঢালাওভাবে অভিযোগ করেন, পুলিশ কারণে-অকারণে মামলা দিচ্ছে। এ ছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণের চেয়ে মামলাতেই ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্যের আগ্রহ বেশি।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট হচ্ছে। তীব্র যানজটের কারণে ১০ কিলোমিটার পথ যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বা এরও বেশি সময় লাগছে। অফিস ছুটি ও খোলার সময় এই যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। প্রতিদিনই রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিছু ট্রাফিক সার্জেন্টকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি ধরে গণহারে মামলা দিতে দেখা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যানজট নিয়ন্ত্রণের চেয়ে মামলাতেই আগ্রহ বেশি ট্রাফিক পুলিশের।

পুলিশ সদর দফতরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, আগস্ট মাসে সারা দেশে ৮০ হাজার ১৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে করা মামলায় জরিমানা হয়েছে ২৫ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৫ টাকা। এর আগে জুলাই মাসে ৭২ হাজার ১০৮টি মামলায় জরিমানা করা হয় ২০ কোটি ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৬ টাকা। মে মাসে মামলার সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ৩১৪টি। জরিমানা ছিল ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আট মাসে সারা দেশে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬২টি মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৭ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৯ টাকা।

ট্রাফিক পুলিশ কেন এত মামলা করছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তারজনিত লকডাউনের পর গত মাসের ১১ তারিখ থেকে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়েছে। মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হচ্ছে বেশি। আবার ঢাকার বাইরে থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসছে। মানুষের মধ্যে আবার লকডাউনসহ নানা ধরনের ভীতিও কাজ করছে। সবাই নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিতে চাইছে। রাস্তার স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি চলার কারণে কে আগে কে পরে যাবে এসব নিয়ে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে বেশি। সড়কে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেল, ভারী যানবাহন, হালকা যানবাহন, গণপরিবহনসহ বিভন্ন ধরনের গাড়ি চলছে। রাজধানীর বাইরে থেকে নতুন নতুন গাড়িচালক ঢাকায় আসছেন। আবার ঢাকা থেকে বাইরে যাচ্ছেন। এখানে গাড়ি চালনা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞতার একটি বিষয় আছে। দীর্ঘদিন গাড়ি না চালানোর কারণে অনেকের অভ্যাসও নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে সামগ্রিক অনেক কারণে প্রসিকিউশনের মামলা সংখ্যা বাড়ছে।’

ঢালাও মামলা ও অযৌক্তিক জরিমানার কারণে বহু বাসমালিকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে উল্লেখ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘যে মামলাই ট্রাফিক পুলিশ করুন, জরিমানা গুনতে হয় মালিককে। করোনার লকডাউনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবহন খাত। মাস দুয়েক হলো রাস্তায় গাড়ি চলছে। সিটি সার্ভিসের গাড়িগুলোসহ অনেক গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ কারণে-অকারণে মামলা দেওয়ায় বহু মালিক এখন নিঃস্ব। মালিকরা গাড়ির ঋণের কিস্তি দেওয়া, এমনকি বাসায় বাজারও করতে পারেন না।’ মামলার বিষয়ে পুলিশকে সহনীয় মনোভাব পোষণের অনুরোধ করেন বাস মালিক সমিতির এই নেতা।

সর্বশেষ খবর