শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
মুজিববর্ষে বিজয় দিবস

স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব

সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি, প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ, অংশ নেবে চার দেশ

উবায়দুল্লাহ বাদল

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব উদ্্যাপন করতে চায় সরকার। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও বর্ণাঢ্যভাবে পালন করা হবে। সে জন্য নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা। করোনা মহামারী সামলে ওঠার প্রেক্ষাপটে এবার জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে হবে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণিল কুচকাওয়াজ। বিজয়োৎসবের এই কুচকাওয়াজে অংশ নেবে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া ভুটান, মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ সহায়তাকারী দেশ ভারত ও রাশিয়া এবং মেক্সিকো। সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এবার মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনী হবে।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবস উদ্্যাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনার কারণে গত বছরের বিজয় দিবসে তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছিল। অন্যান্য অনুষ্ঠানও ছিল সংক্ষিপ্ত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ করোনা মহামারী আমরা সফলভাবে মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই এবার বিজয় দিবস উদ্্যাপন করতে পারব। সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্্যাপন উপলক্ষে এ বছর আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে অনুষ্ঠানের কলেবর বাড়ানো ও ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো। যত বেশি বর্ণাঢ্য ও মনোমুগ্ধকর করা যায় সেই চেষ্টা থাকবে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হবে। এতে অংশ নেবে ভারত, রাশিয়া, মেক্সিকো ও ভুটান। তাদের আমন্ত্রণ জানাবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। এক কথায় বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এবার স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব উদ্্যাপন করবে সরকার।’

জানা গেছে, এবার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সকাল সাড়ে ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি এবং কারারক্ষীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ হবে। একই সঙ্গে হবে বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাই-পাস্ট ও অ্যারোবেটিক এয়ার শো। থাকবে উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে রজ্জু বেয়ে অবতরণ, প্যারাসুট জাম্পও। রাষ্ট্রপতি চলন্ত যান্ত্রিক সামরিক কন্টিনজেন্টের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন। মহান বিজয় দিবসের অন্যতম আকর্ষণ এবং শিক্ষণীয় কর্মসূচি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্্যাপন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানকে যত বেশি বর্ণাঢ্য ও মনোমুগ্ধকর করা যায় থাকবে সেই চেষ্টা। মেক্সিকোর স্বাধীনতার ২০০ বছর উপলক্ষে দেশটির সরকারের আমন্ত্রণে ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৩৯ সদস্যের একটি কন্টিনজেন্ট উদ্্যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এ কারণে বাংলাদেশের বিজয় উৎসবে অংশ নিতে মেক্সিকোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। স্বাধীনতাযুদ্ধে সাহায্যকারী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত ও রাশিয়াকেও এবার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ হিসেবে ভুটানকেও আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে ভারত ও রাশিয়ার ওয়ার ভেটেরানদের (যুদ্ধজয়ী যোদ্ধা) সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের সম্মানে আয়োজিত কর্মসূচির অন্যতম আকর্ষণ হবে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বিজয়োৎসব উদযাপনে ইতিমধ্যে ৭টি কমিটি করা হয়েছে। এগুলো হলো- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিবের নেতৃত্বে বিজয় দিবস উদযাপন স্টিয়ারিং কমিটি, সেনাবাহিনীর সাভারের ৯ পদাতিক ডিভিশন জিওসিকে (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) আহ্‌বায়ক করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সশস্ত্র অভিবাদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ কমিটি, ৯ পদাতিক ডিভিশন জিওসিকে আহ্‌বায়ক করে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ ব্যবস্থাপনা কমিটি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে আলোচনা ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ-সংক্রান্ত উপকমিটি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে প্রধান করে নিরাপত্তা ট্রাফিক ও পুলিশের ব্যবস্থাপনা উপকমিটি, যান্ত্রিক বহর প্রদর্শন সংক্রান্ত মূল্যায়ন ও স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত উপকমিটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) নেতৃত্বে আমন্ত্রণ ও সংবর্ধনা উপকমিটি।

সর্বশেষ খবর