শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশ্ব পথশিশু দিবস আজ

পথশিশুরা অবহেলিত জড়াচ্ছে অপরাধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুরে জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ওপর প্রায়ই কয়েকটি পথশিশুকে পলিথিনে জড়ানো এক ধরনের হলুদ পদার্থের গন্ধ শুঁকতে দেখা যায়। এদের কাউকে কাউকে উড়ালসড়কটির নিচে আইল্যান্ডের ওপর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই পথশিশুরা নিয়মিত ‘ড্যান্ডি’ নামক মাদক নেয়। একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে থাকে।

রাজধানীর আরও অনেক সড়কে পথশিশুদের এভাবে দেখা যায়। অবহেলিত এই শিশুরা দুই বেলা ভরপেট খেতে না পারলেও কষ্ট করে রোজগার করা, ভিক্ষাবৃত্তির বা কোনো অপরাধমূলক কাজ করে আয় করা টাকায় এসব মাদক নিচ্ছে। বিষয়টি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্যেও উঠে এসেছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে ঢাকায় মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে আর ১৭ শতাংশ মেয়ে। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে ও মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের বেশির ভাগ পথশিশু। প্রায়ই ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও উড়ালসড়কে এদের ‘ড্যান্ডি’ নামক মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া এদের অনেকেই গাঁজা, ইয়াবা ও নেশার ইনজেকশনও নেয়। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের গবেষণা বলছে, পথশিশুর ৮৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত। এর ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণ করে।

এই শিশুরা অত্যন্ত অমানবিক পরিবেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে অনিরাপদ পরিবেশে বড় হচ্ছে। সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রামের এক গবেষণা বলছে, ৪১ শতাংশ পথশিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই। ৪০ শতাংশ গোসল করতে পারে না। ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই। ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। আর করোনা পরিস্থিতি পথশিশুদের সংকট আরও বাড়িয়েছে।

উদ্বেগজনক যে পথশিশুরা চুরি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। আগের তুলনায় পথশিশুদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকহীন এসব শিশু ক্ষুধার তাড়নায় বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। অন্য এক গবেষণা বলছে, পথশিশুরা মাদক গ্রহণের পাশাপাশি বিক্রির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। আর এ ধরনের পথশিশুর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে মাদক বিক্রি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ শিশু। রাজধানীতে বিভিন্ন সময় যে ছিনতাই ঘটে তার বেশির ভাগের সঙ্গেই জড়িত ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী পথশিশুরা। আবার এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বে যে কিশোর অপরাধীরা জড়িত সেখানেও পথশিশুরা। এ অবস্থায় আজ পালিত হবে বিশ্ব পথশিশু দিবস। পথশিশুদের পুনর্বাসন তথা তাদের জীবনমান উন্নত করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই দিবসটি পালিত হয়। দেশে পথশিশুর সঠিক সংখ্যা এখনো নির্দিষ্ট করা না গেলেও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) ও ইউনিসেফের এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। শুধু ঢাকায় এ সংখ্যা ৭ লাখ। চলতি বছরের শেষে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪-তে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ সংখ্যাটি দাঁড়াবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০-এ। দেশের ছোট বড় সব শহরেই পথশিশুর দেখা মেলে। বিশেষ করে ফুটপাথ, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা, মাজার, টার্মিনাল, রেলস্টেশন, যাত্রী ছাউনিতে এরা আশ্রয় নেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর