পৌনে দুই বছর ধরে বিশ্বকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখা করোনাভাইরাস মহামারীতে মোট মৃত্যু ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সূত্র : রয়টার্স।
এক হিসাবে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়েই এখন টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরা ভাইরাসের অতি সংক্রমক ধরন ডেল্টায় বেশি ধরাশায়ী হচ্ছেন; তার মধ্যেই গত শুক্রবার বিশ্ব এ দুঃখজনক মাইলফলক ছাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত যত মানুষের প্রাণ গেছে, তার অর্ধেকেরও বেশি দেখেছে ৭টি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভারত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে প্রথম আবির্ভূত হওয়া কভিডে প্রথম ২৫ লাখ মানুষের মৃত্যুতে সময় লেগেছিল এক বছরের খানিকটা বেশি; আর পরের ২৫ লাখের জন্য লাগল ৮ মাসেরও
কম। ভাইরাস কেবল গত সপ্তাহেই প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার, মিনিটে ৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; অবশ্য এই সংখ্যা কয়েক মাস আগের তুলনায় অনেক কম। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুহার ধীরে ধীরে কমে আসায় বিশেষজ্ঞদের অনেকের মধ্যে স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এ কারণেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেয়েও বিশ্বনেতাদের কাছে এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে টিকাদানের হার বাড়ানো। খবরে বলা হয়, ডেল্টা ধরন ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকাদানের হারে ব্যাপক বৈষম্যের বিষয়টিও উন্মোচন করে দিয়েছে; অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর কোথাও কোথাও পর্যাপ্ত টিকা থাকার পরও মানুষজন টিকা নেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কোম্পানি কোটি কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করলেও দরিদ্র দেশগুলোর অসংখ্য মানুষ এখনো প্রথম ডোজই পায়নি। ধনী দেশগুলো তাদের জনসংখ্যা অনুপাতে কয়েকগুণ বেশি টিকার ক্রয়াদেশ দিয়ে রেখেছে; কোনো কোনো দেশ এরই মধ্যে বেশিরভাগ নাগরিককে টিকা দেওয়া শেষে শুরু করেছে বুস্টার ডোজের প্রয়োগ। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি এখনো টিকার বাইরে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৬২৭ কোটি ডোজ সরবরাহ হয়েছে; অথচ স্বল্প আয়ের দেশগুলোর মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ ‘ভাগ্যবান’ মানুষ নিতে পেরেছেন প্রথম ডোজ। কয়েকদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, তাদের কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় এখন সেসব দেশেই টিকা পাঠানো হবে, যারা তুলনামূলকভাবে কম টিকা সংগ্রহ করতে পেরেছে। এই কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় জানুয়ারি থেকে ১৪০টি রাষ্ট্রে জনসংখ্যা অনুপাতে টিকা পাঠানো হয়েছিল।বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখন শনাক্ত রোগী ও হাসপাতালে ভর্তির হার খানিকটা নিম্নমুখী হলেও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে চার দেয়ালের ভিতর কর্মকান্ড বেড়ে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলেও কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। শুক্রবার রাশিয়া করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ ৮৮৭ জনের মৃত্যু দেখেছে; এ নিয়ে টানা চারদিন দেশটিতে কোভিডে মৃত্যু আগেরদিনের রেকর্ড টপকাল। রাশিয়ায় টিকা পাওয়ার উপযুক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩ শতাংশ প্রথম ডোজ পেয়েছেন। অঞ্চলগুলোর মধ্যেই দক্ষিণ আমেরিকাই কোভিডে বিশ্বের মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশের সাক্ষী হয়েছে বলে জানাচ্ছে পর্যালোচনা; ১৪ শতাংশের বেশি মৃত্যু নিয়ে দক্ষিণের পেছনেই আছে উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপ। তবে অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টায় প্রথম বিপর্যস্ত দেশগুলোর অন্যতম ভারতে এখন দৈনিক মৃত্যু ৪ হাজার থেকে কমতে কমতে ৩০০-তে এসে পৌঁছেছে। দেশটিতে টিকাদানের গতিও অনেক বেড়েছে। ভারতের টিকা পাওয়ার উপযুক্তদের প্রায় ৪৭ শতাংশই টিকার প্রথম ডোজ পেয়ে গেছেন; দেশটির কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৯ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছেন বলে আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্য থেকে জানা গেছে। করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন বিশ্বজুড়ে ডেল্টারই একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যাচ্ছে; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪ সদস্য রাষ্ট্রের ১৮৭টিতেই ধরনটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।