রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
সাউথ বাংলার ঋণ জালিয়াতি

আসামির তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন আমজাদ ও মোয়াজ্জেম

আনিস রহমান

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে শিগগিরই একাধিক মামলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন (অব.) মোয়াজ্জেম হোসেনসহ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে। দুদক কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের                 কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম। ওই টাকা নিয়ে তিনি পিপলস লিজিং ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। পরে তিনি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের পরিচালক হন। ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এস এম আমজাদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জালিয়াতি করে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। দুদকের অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে এসবিএসি ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানকে নিয়োগ দেয়। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এসবিএসি ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির তথ্য-উপাত্ত পান। এসব ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ আরও কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আমজাদ হোসেন ও ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে একাধিক মামলার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এরপর কমিশনের অনুমোদন পেলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পিপলস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নন্দী বলেছেন, পিপলস লিজিং ধ্বংসের জন্য মোয়াজ্জেম দায়ী। তিনি পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান ছিলেন। পি কে হালদার সিন্ডিকেটের একজন অন্যতম সদস্য তিনি। মোয়াজ্জেম পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পি কে হালদারের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা ঘুষ নেন। দুদকের তথ্যমতে, পিপলস লিজিং থেকে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খোলাপি ঋণ রয়েছে। এ টাকা মূলত ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা সরাসরি পরিচালকরা নামে-বেনামে নিয়েছেন।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পিপলস লিজিং ছাড়ার পর ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম এসবিএসি ব্যাংকের পরিচালক হন। ওই সময় তিনি, আমজাদ এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তা যোগসাজশ করে জালিয়াতির মাধ্যমে আল আমিন এন্টারপ্রাইজ ও রাফি-মাহি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করান। পরে শাখার কর্মকর্তাদের সহায়তায় সেই অর্থ আমজাদ ও মোয়াজ্জেমের ব্যক্তিগত হিসাব এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করেন। এরপর তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয় বলে তথ্য-প্রমাণ পায় দুদক। বিষয়টি ধরা পড়ার পর আমজাদ ও মোয়াজ্জেম ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এটি মানি লন্ডারিং অপরাধ বলে স্বীকার করেন। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে এসব অপরাধলব্ধ অর্থ ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন, যা ব্যাংকের বোর্ড রেজুলেশনে উল্লেখ আছে। ব্যাংকের অডিট প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, যা দুদকের হাতে এসেছে। দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর