রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তালা খুললেন শিক্ষার্থীরা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসের পর সিরাজগঞ্জ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চুল কাটার ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শিথিল করে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবরোধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টিকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শুক্রবার রাতে সংশোধিত এক নোটিসে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি, শুধু চলমান পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাজমুল হাসান পাপন জানান, আন্দোলনরত তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হবে। তার আশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিয়েছি এবং অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, অফিস চলাকালীন আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করব, কোনো স্লোগান বা বক্তব্য দেওয়া হবে না। সোমবারের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে মঙ্গলবার থেকে আবারও কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও এ শিক্ষার্থী জানান। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালনকারী ট্রেজারার আবদুল লতিফ জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারে নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হলে নীতিমালা, সংবিধান ও নিয়মকানুন মেনে করতে হবে। এটা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে, এ জন্য সময় দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকবে, তবে কোনো ক্লাস হবে না। নির্ধারিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। অন্যদিকে তদন্ত কমিটির সভাপতি ও রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল জানান, তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন নিজেই কাঁচি হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগে ওঠে।

 সেই শিক্ষার্থীদের একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তাকে বকাঝকা করায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন। যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ওই ঘটনায় ফারহানা ইয়াসমিনকে অপসারণের দাবিতে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের চলমান অবস্থায় চুল কাটার একটি সিসি টিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি একটি বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকা  বন্ধ রাখার নির্দেশনা হয়। এ অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন তুলে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবরোধ করে সামনে অবস্থান করতে থাকেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর