মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
সুজনের গোলটেবিলে বক্তারা

ইসি গঠনে সার্চ কমিটি ধোঁকা দেওয়ার প্রক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রয়োজন। গতকাল ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘সার্চ কমিটি’ একটি ধোঁকা দেওয়ার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে অযোগ্যদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে খুঁজে বের করা হয়। যার ফলে গত দুটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শুধু একটি ভালো নির্বাচন কমিশন হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এ জন্য নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন। গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ওই অনলাইন গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। গোলটেবিল বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে প্রস্তাবিত আইনের প্রাথমিক একটি খসড়া তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নিয়ে একটি চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হবে। এরপর সেটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে সুজন। আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, সংবিধানের প্রতি সম্মান রেখেই কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন করার ক্ষেত্রে সংবিধানের মধ্য থেকে কী কী করা যায়, সেটি ভাবতে হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সংবিধান বদলানো যাবে না, এমনটা নয়। প্রয়োজনে সংবিধান সব সময় বদলানো যায়। তিনি মনে করেন, নির্বাচনকালীন সময়ে তিন মাসের জন্য আসা একটি সরকার তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না। এ জন্য দরকার একটি জাতীয় সরকার। বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে বিচারপতিদের না আনাই ভালো মনে হয়। কারণ কমিটি নিয়োগ দেওয়ার পর কমিশন ভালো না হলে বিচারপতিগণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। তাঁদের এই বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখাই উত্তম। সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। পরপর দুটি সার্চ কমিটির পারফরম্যান্স মানুষ দেখেছে, এ দুটি কমিটির অর্জন সন্তুষ্ট হওয়ার মতো নয়। বর্তমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন করার জন্য জোরেশোরে আন্দোলন করা প্রয়োজন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধানের ধারাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এর আগেও ২০১১ সালে আমরা একটি খসড়া প্রস্তাব করেছিলাম, দুঃখজনক হলেও এটি নিয়ে পরবর্তীতে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের এমন একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা উচিত যেটি দূরদর্শী হবে, শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নয়। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আছে আর চার মাস। সময় খুব বেশি নেই। অবশ্য আইন তৈরি করতে চাইলে এই সময়ের মধ্যে তা সম্ভব। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নির্বাচন করা এবং সেই নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। একটি আইন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে এটাও সত্য যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে না পারলে কোনো কমিশন দিয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব না। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান মেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনে আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনটি হতে হবে জনস্বার্থে- দলীয় স্বার্থে নয়। আইন প্রয়োগও হতে হবে জনগণের স্বার্থে, যাতে কয়েকজন সৎ, নির্ভীক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পান। ড. শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির ব্যাপারে বলব, এটির মাধ্যমে জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রথম চারজন নিয়োগ দিয়ে এক বছর পর আরেকজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। সেটি হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জাতীয় সরকার বা অন্য কিছু। গোলটেবিল অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ড. আবদুল আলিম, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর