বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

জনবল কাঠামোতে ৭৪৭ পদ সৃজনে জনপ্রশাসনের সম্মতি

শক্তিশালী হচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন

উবায়দুল্লাহ বাদল

পূর্ণাঙ্গ রূপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নবগঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। দেশের ১২তম এই সিটি করপোরেশনের মোট ৭৪৭টি পদ সৃষ্টির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও কাগজপত্র চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর এ প্রস্তাব পাঠানো হবে অর্থ বিভাগে। ছাড়পত্র মিললে তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে। তাদের সম্মতি পাওয়ার পর জনবল নিয়োগের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবে মসিক। প্রস্তাবিত জনবল নিয়োগের পর পূর্ণাঙ্গ শক্তি নিয়ে নগর সেবার কাজ শুরু করতে পারবে স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মসিক মেয়র ইকরামুল হক টিটু গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মসিকের জনবল কাঠামোতে ৭৪৭টি পদ সৃষ্টির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতির চিঠি পেয়েছি। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। এখন আমাদের কাজের পরিধি বেড়েছে। জনগণকে সেবা দিতে হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই জনবল কাঠামোর অনুমোদন দিতে হবে। একটি সিটি করপোরেশনের যে ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা থাকার কথা তার কিছুই নেই এখানে। নতুন সিটি করপোরেশন হিসেবে ময়মনসিংহে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সিটির মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় ও মন্ত্রণালয়ের সহায়তা পেলে সেবার মানের দিক দিয়ে ময়মনসিংহকে ১ নম্বর সিটি করব ইনশাল্লাহ।’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা। ১৭৯১ সালে ময়মনসিংহ জেলা সদরের পত্তন হয়। ১৮৬৯ সালে শহরের সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত হয় পৌরসভা। সে সময় এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ও উপমহাদেশের দ্বিতীয় পৌরসভা। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এটি বাংলাদেশের ১২তম সিটি করপোরেশন। এর আয়তন ৯১ দশমিক ৩১৫ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৮ লাখ। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবল কাঠামোর বিষয়ে প্রস্তাব পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে অধুনালুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার ২৩২টি পদ নবগঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তি প্রস্তাব অনুমোদন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১৩টি পদ স্থায়ী পদ এবং নগরভবন ও তিনটি অঞ্চলের ৫০২টি পদসহ মোট ৭৪৭টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৩টি ক্যাডার পদ রয়েছে। ৫০২টি পদ বছর বছর সংরক্ষণের ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে সৃষ্টির শর্তে সম্মতি দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাডার পদগুলো হল-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, মেয়রের একান্ত সচিব (পিএস), জনসংযোগ কর্মকর্তা, দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন), প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। মসিক সূত্র জানায়, নবগঠিত এই সিটি করপোরেশনে রাতের বেলা নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ১ হাজার ৩০৩টি শেডসহ এনার্জি সেভিং ল্যাম্প ও ৫ হাজার ৩৭০টি শেডসহ এলইডি লাইট স্থাপন করা হবে। ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন সড়কে সড়কবাতি স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় এতে মোট ব্যয় হবে ৪৯ কোটি টাকা। এর আওতায় নগরী আলোকিত করতে ৩৬৬টি সোলার প্যানেল, ২৭০টি গার্ডেন লাইট, ৬ হাজার ৬৭৩টি ইলেকট্রিক্যাল পোল, ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১১৭ মিটার সার্ভিস তার ও ৭৭টি বৈদ্যুতিক মিটার বসানো হবে। এছাড়া মসিকের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ সরবরাহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৬ কোটি ৩৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নাগরিক সেবার চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর এলাকায় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র না থাকায় স্থানীয় রাজস্ব দিয়ে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। নগর এলাকার পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে নবাগত এবং বসবাসরত নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর