বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষতিগ্রস্ত শহরের শীর্ষে ঢাকা

চরম উষ্ণতা

প্রতিদিন ডেস্ক

ক্ষতিগ্রস্ত শহরের শীর্ষে ঢাকা

বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের ৫০টি শহরের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এতে ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে। দেশের শহরগুলোর মধ্যে এ তালিকায় ঢাকা ছাড়াও রয়েছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ গত সোমবার গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। এতে ঢাকা সম্পর্কে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বছরে এ শহরে মোটের ওপর ৫ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ (বিভিন্ন কাজে ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষসহ) তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার চেয়ে কম কাজ করতে পারছেন। শুধু তা-ই নয়, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যাও বাড়ছে।

গবেষণায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বের ৫০টি শহরের ওপর করা একটি সমীক্ষার ফলাফলও তুলে ধরা হয়। গবেষণায় ওঠে এসেছে, দ্রুত উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মানুষ কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে, বিশ্বের এমন ২৫টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত। আর বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। ওই তালিকা থেকে শীর্ষ ৫০টি শহরের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। উষ্ণায়নের ক্ষতি ও ঝুঁকির বিবেচনায় ঢাকার পরই রয়েছে ভারতের রাজধানী শহর দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাই এবং থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। ৫০টি শহরের এই তালিকায় শুধু ভারতের শহরই রয়েছে ১৭টি। এসব শহরের গড় উষ্ণতা ৩২ বছরে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছে চীনের সাংহাই ও গুয়াংঝৌ, মিয়ানমারের ইয়াংগুন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের নামও। গবেষণায় ১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৩ হাজারের বেশি শহরের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে একই সময়ে শহরগুলোর মোট জনসংখ্যার তথ্য। গবেষকরা বলছেন, শহরের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেটিকে ‘চরম উষ্ণ’ বলা যায়।

ঢাকাবাসীর কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণও ওঠে এসেছে গবেষণায়। তাতে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে জনসংখ্যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত (২ দশমিক ৭ শতাংশ) হারে বাড়ছে। ১৯৮৩ সালে এখানকার জনসংখ্যা ছিল ৪০ লাখ। ২০১৬ সালে তা বেড়ে প্রায় ২ কোটি হয়। এ ছাড়া এই শহরে সারা বছরই দেশের অন্যান্য জেলা থেকে মানুষ আসা-যাওয়া করে। সবমিলিয়ে এই শহরে মানুষের উপস্থিতির সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ধরেছেন গবেষকরা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই শহরের গাছপালা কমেছে। বেড়েছে কংক্রিটের ইমারত। এই ৩২ বছরে ঢাকার মোট তাপমাত্রা যে পরিমাণে বেড়েছে, তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভূমিকা ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ মূলত দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঘটেছে।

গবেষণায় দ্রুত উষ্ণতা বেড়েছে, বিশ্বের এমন ২৫টি দেশের কত মানুষ উষ্ণায়নের কারণে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতে উষ্ণায়নের কারণে ১১০ কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ এই ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ৩৭ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে। বাকি  ৬৩ শতাংশ ঘটেছে স্থানীয় কারণ। ১৪ কোটি ৩১ লাখ মানুষ কর্মক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে থাকায় তালিকায় পাকিস্তান তৃতীয়, ১১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষের ঝুঁকির কারণে চীন চতুর্থ এবং ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে থাকায় নাইজেরিয়া পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্যাসকেড টুহলস্কি বলেন, চরম উষ্ণতার ফলে অসুস্থতা ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের কর্মক্ষমতায়। গবেষকরা বলছেন, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোর উষ্ণতা বেশি বেড়েছে, যা নগরায়ণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানকার দরিদ্র মানুষের আয় বৃদ্ধিতে অসামঞ্জস্য তৈরি করেছে। এ সমস্যা সমাধানে মানবিক সহায়তা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও সরকারি উদ্যোগ জরুরি।

সর্বশেষ খবর